ওয়েব ডেস্ক; ১২ জুন : বিশ্ব পরিবেশ দিবস ও বিশ্ব মহাসাগর দিবস উপলক্ষে আইসিএআর-সেন্ট্রাল ইনল্যান্ড ফিশারিজ রিসার্চ ইনস্টিটিউট (আইসিএআর-সিআইএফআরআই), চিলিকা ডেভেলপমেন্ট অথরিটি (সিডিএ) এবং সাসটেইনেবল সিফুড নেটওয়ার্ক অফ ইন্ডিয়া (এসএসএনআই)-র যৌথ উদ্যোগে বারাকপুরের আইসিএআর-সিআইএফআরআই-তে এক দিনের জাতীয় কর্মশালা আয়োজিত হয়। কর্মশালার বিষয় ছিল — “স্বাস্থ্যসম্মত জলজ বাস্তুব্যবস্থা ও চিলিকা হ্রদের সুস্থায়ীত্ব নিশ্চিত করা”।
এই কর্মশালায় বিজ্ঞানী, নীতিনির্ধারক, শিল্পজগতের বিশেষজ্ঞ ও জননেতারা অংশগ্রহণ করেন। চিলিকা হ্রদ-সহ জলজ পরিবেশের মুখোমুখি বাধা, যেমন দূষণ, জীববৈচিত্র্যের ক্ষয়, অতিমাত্রায় মৎস্য আহরণ এবং তার খাদ্য নিরাপত্তা ও স্থানীয় জীবিকা নির্বাহের ওপর প্রভাব প্রভৃতি নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা হয়।
চিলিকা হ্রদে ইলিশ মাছ কমে যাওয়া এবং মৎস্যসম্পদের সুস্থায়ী পুনরুদ্ধার ও ব্যবস্থাপনার প্রয়োজনীয়তার ওপর বিশেষভাবে গুরুত্ব দেওয়া হয়।
কর্মশালায় বৈজ্ঞানিক ও নীতিনির্ভর নানা সমাধান নিয়ে আলোচনা করা হয়, যেমন মেরিন স্টুয়ার্ডশিপ কাউন্সিল (এমএসসি)-এর সার্টিফিকেশন প্রোগ্রাম। এই প্রক্রিয়া দায়িত্বশীল মৎস্যচর্চা ও সামুদ্রিক জীবের সংরক্ষণে সহায়তা করবে বলে আশা করা যায়।
চিলিকা হ্রদের কাদামাটির কাঁকড়া সংক্রান্ত মৎস্যচর্চার সুস্থায়ী উন্নয়নের দিকটিও তুলে ধরা হয়। অনেক স্থানীয় পরিবারের আয়ের এটিই মুখ্য উৎস। নতুন গবেষণা, বাস্তব অভিজ্ঞতা ও বিভিন্ন ঘটনার বিশ্লেষণের মাধ্যমে জলচর জীববৈচিত্র্য রক্ষার পাশাপাশি, স্থানীয় জনজীবনের উন্নয়নের প্রয়োজনীয়তা নিয়েও আলোচনা হয়।
উল্লেখযোগ্য উপস্থিতিদের মধ্যে ছিলেন ডঃ বি. কে. দাস, পরিচালক, আইসিএআর-সিআইএফআরআই; ডঃ রঞ্জিত সুশীলন, ভারতীয় প্রধান, এমএসসি; এবং ডঃ সুনীল মহম্মদ, সভাপতি, এসএসএনআই। এছাড়াও, সিআইএফআরআই, সিডিএ এবং বিভিন্ন স্থানীয় বিশ্ববিদ্যালয়ের বিজ্ঞানীরা কর্মশালায় অংশগ্রহণ করেন।
ইলিশ ধরার সঙ্গে যুক্ত মৎস্যজীবীরাও কর্মশালায়
উপস্থিত ছিলেন এবং তারা তাঁদের বাস্তব অভিজ্ঞতা ভাগ করে নেন।
ডঃ সুনীল মহম্মদ বলেন, এমএসসি-র সুস্থায়ীতা সংক্রান্ত শংসাপত্র দান পরিবেশগত ও অর্থনৈতিক – উভয় ক্ষেত্রেই লাভজনক হবে। “এই আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি বাজারে পণ্যের প্রবেশাধিকার এবং ভাল দাম পাওয়া নিশ্চিত করবে,” বলে তিনি জানান। “এই প্রক্রিয়ার ফলে মাছের মজুত টিকিয়ে রাখা, পরিবেশগত ক্ষতি হ্রাস করা এবং কার্যকর ব্যবস্থাপনা নিশ্চিত করবে। ইকোলেবেলিং ট্যাগ অর্জনের মাধ্যমে চিলিকা হ্রদের মৎস্যচাষ আন্তর্জাতিক বাজারে প্রতিযোগিতার উপযোগী হবে। বর্তমানে ভারতের বিশ্ব মৎস্য রপ্তানিতে অংশীদারিত্ব ৪ শতাংশ এবং এটি ক্রমবর্ধমান,” বলে তিনি তিনি মন্তব্য করেন।
এমএসসি-র ওসিয়ান স্টুয়ার্ডশিপ ফান্ড-এর মাধ্যমে এই মৎস্যচাষের প্রাথমিক মূল্যায়ণের জন্য অর্থ প্রদান করা হচ্ছে।
ডঃ বি. কে. দাস বলেন, চিলিকা হ্রদের বাস্তুসংস্থান রক্ষায় ও স্থানীয় জনগোষ্ঠীর জীবিকা সুরক্ষিত রাখতে সুস্থায়ী মৎস্য পরিচালনা অপরিহার্য। তিনি আর-ও বলেন, সহযোগিতা, বিজ্ঞান ও উদ্ভাবনকে একত্রে নিয়ে এসে দায়িত্বশীল মৎস্যচর্চাকে উৎসাহিত করা প্রয়োজন এবং সার্টিফিকেশনের পথ সে ক্ষেত্রে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হতে পারে। এই কর্মশালাকে তিনি সংরক্ষণ ও উন্নয়নের সমন্বয়ে ভবিষ্যতের একটি দিশা হিসেবে অভিহিত করেন।
ডঃ রঞ্জিত সুশীলন বলেন, পরিবেশগত স্বাস্থ্য ও সামাজিক কল্যাণের মধ্যে সরাসরি সম্পর্ক রয়েছে। বিজ্ঞানসম্মত ও সুস্থায়ী অনুশীলন গ্রহণের মাধ্যমে জীববৈচিত্র্য এবং জীবিকার সুরক্ষা – উভয়ই সম্ভব।
জলবায়ু পরিবর্তন ও দূষণের বেড়ে চলা সমস্যার প্রেক্ষিতে এই কর্মশালার সুপারিশ ভবিষ্যতের নীতিনির্ধারণ ও সমাজনির্ভর সংরক্ষণমূলক পদক্ষেপে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আশা করা যায়। বিশেষজ্ঞরা অভিযোজিত ব্যবস্থাপনা, পরিবেশবান্ধব মৎস্যচর্চা এবং সুস্থায়ী সংগ্রহের বিষয়ে সচেতনতা বৃদ্ধির ওপর গুরুত্ব দেন।