ওয়েব ডেস্ক ; ২৮ নভেম্বর : মাটির প্রধান জৈব উপাদান কেঁচো সুস্থ বাস্তুতন্ত্র বজায় রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। পুষ্টিচক্র সচল রাখা, মাটির মধ্যে বায়ু চলাচল এবং মাটির গঠনে সক্রিয় ভূমিকা নিয়ে মাটির ঊর্বরতা বৃদ্ধি ও গাছপালার বেড়ে ওঠায় এর অবদান অপরিসীম। সুস্থিত বাস্তুতন্ত্র অক্ষুণ্ণ রেখে দীর্ঘমেয়াদে তার সুস্বাস্থ্য কিভাবে বজায় রাখা যায়, মাটির গুণমান পরীক্ষা করে গবেষকরা তা বোঝার চেষ্টা করেন। ভারতীয় প্রাণীতত্ত্ব সর্বেক্ষণ-এর অধিকর্তা ডঃ ধৃতি ব্যানার্জি পশ্চিমবঙ্গের বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যগুলিতে কেঁচোর বিভিন্ন প্রজাতির স্থানিক বন্টন নিয়ে একটি গবেষণা শুরু করেছে। ভারতীয় প্রাণীতত্ত্ব সর্বেক্ষণ-এর গবেষক ডঃ শাকুর আহমেদ ২২ ধরনের প্রজাতির সন্ধান পেয়েছেন। এর মধ্যে রায়গঞ্জ অভয়ারণ্যে সবথেকে বেশি সংখ্যক প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। ডঃ এন মারিমুথু তাঁর বিশ্লেষণে নয়টি গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক প্রজাতির হদিশ পেয়েছেন। রায়গঞ্জ ছাড়া সব অভয়ারণ্যেই নির্দেশক হিসেবে অন্তত একটি করে বিদেশি প্রজাতির সন্ধান মিলেছে। পাখিদের বাসা বাঁধার স্থান হিসেবে পরিচিত রায়গঞ্জে নির্দেশক হিসেবে ইউটিফোস নিকোলসোনি নামে স্থানীয় প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে।

ফ্রন্টিয়ার্স ইন ইকলজি অ্যান্ড এভোলিউশন-এ প্রকাশিত এইসব তথ্য থেকে আমরা কেঁচোর প্রজাতিগত বৈচিত্র্য এবং অভয়ারণ্যগুলিতে বাস্তুতন্ত্র বজায় রাখার ক্ষেত্রে তাদের গুরুত্ব সম্পর্কে জানতে পারি। কেঁচো ক্ষয়ে যাওয়া জৈব পদার্থ গ্রহণ করে, তা হজম করে এবং পুষ্টি সমৃদ্ধ ভার্মিকাস্ট নিঃসরণ করে। পুষ্টি ও উপকারী জীবাণু সমৃদ্ধ এই প্রাকৃতিক সার মাটির স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটায়, উদ্ভিদের বিকাশে সহায়ক হয় এবং রাসায়নিক সারের চমৎকার বিকল্প হিসেবে কাজ করে। ভার্মিকম্পোস্টিং-এ জৈব বর্জ্যের পচন ত্বরান্বিত করতে কেঁচোকে ব্যবহার করা হয়।

কেঁচোর বিভিন্ন প্রজাতির স্থানিক বন্টন বিশ্লেষণের জন্য ভারতীয় প্রাণীতত্ত্ব সর্বেক্ষণ-এর উদ্যোগে বল্লভপুর, বেথুয়া ডহরি, বিভূতিভূষণ, রায়গঞ্জ / কুলিক এবং রমনাবাগান বন্যপ্রাণী অভয়ারণ্যে সমীক্ষা চালানো হয়। ডঃ শাকুর আহমেদ ১২টি বংশ এবং ছ’টি পরিবারের মোট ২২ ধরনের প্রজাতি শনাক্ত করেন।

সবথেকে বেশি প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে রায়গঞ্জ অভয়ারণ্যে (১৫)। এরপরে রয়েছে বেথুয়া ডহরি (১৪), বল্লভপুর (১১), বিভূতিভূষণ (১০) এবং রমনাবাগান (৮)। নির্দেশক প্রজাতি বিশ্লেষণে ২২টির মধ্যে ৯টি প্রজাতিকে গুরুত্বপূর্ণ নির্দেশক হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। এই কাজটি করেন ভারতীয় প্রাণীতত্ত্ব সর্বেক্ষণ-এর বিজ্ঞানী এবং জেনারেল নন-করডাটা সেকশনের ভারপ্রাপ্ত ডঃ এন মারিমুথু। এই ৯টি প্রজাতির মধ্যে তিনটি প্রজাতি বেথুয়া ডহরি, দুটি করে প্রজাতি বল্লভপুর ও রমনাবাগান এবং একটি করে প্রজাতি রায়গঞ্জ ও বিভূতিভূষণ অভয়ারণ্য থেকে পাওয়া গেছে।

রায়গঞ্জ ছাড়া অন্য সব অভয়ারণ্যে নির্দেশক হিসেবে অন্তত একটি করে বিদেশি প্রজাতির সন্ধান পাওয়া গেছে। বিভূতিভূষণের ক্ষেত্রে এটি হল মেটাফায়ার পসথুমা, বেথুয়া ডহরির ক্ষেত্রে অ্যামিথাস আলেকজান্দ্রি, বল্লভপুরের ক্ষেত্রে ডিকোগাস্টার অ্যাফিনিস এবং রমনাবাগানের ক্ষেত্রে পোন্টোসকোলেক্স কর্থারাস।

লক্ষ্য করার বিষয় হল, রায়গঞ্জে নির্দেশক হিসেবে যে একটিমাত্র স্থানীয় প্রজাতির সন্ধান মিলেছে তা হল, ইউটিফোস নিকলসোনি। এখানে আরও বেশ কিছু প্রজাতিও রয়েছে। এই স্থানটি পাখিদের বাসা বাঁধার স্থান হিসেবেও পরিচিত। সম্পূর্ণ গবেষণার ফলাফল সায়েন্স সাইটেশন ইন্ডেক্স (এসসিআই) – ফ্রন্টিয়ার্স ইন ইকলজি অ্যান্ড এভোলিউশন-এ প্রকাশিত হয়েছে।

ভারতীয় প্রাণীতত্ত্ব সর্বেক্ষণ-এর অধিকর্তা ডঃ ধৃতি ব্যানার্জি ভার্মিকালচারের জন্য স্থানীয় প্রজাতির কেঁচো খুঁজে বের করার প্রয়োজনীয়তার ওপর জোর দিয়েছেন। বিদেশি প্রজাতিগুলিকে প্রায়শই ব্যবহার করা হলেও, স্থানীয় প্রজাতির ওপর জোর দেওয়া হলে কৃষি বাস্তুতন্ত্রের ওপর বহিরাগত প্রভাব প্রতিরোধ করা যাবে বলে তিনি মনে করেন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *