ওয়েব ডেস্ক ; ৩১ মে : ভারত সরকারের স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক এদিন বিশ্ব তামাক বিরোধী দিবস উদযাপন করলো। এ বছরের থিম হলো ‘তামাক শিল্পের হস্তক্ষেপ থেকে শিশুদের রক্ষা করা।’ তামাক সেবনে ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে যুব সম্প্রদায়কে রক্ষা করার জরুরি প্রয়োজনের দিকে তাকিয়ে বিষয়টিকে তুলে ধরা হয়েছে। কেন্দ্রীয় স্বাস্থ্য সচিব অপূর্ব চন্দ্র তামাক ব্যবহারের ভয়াবহ ক্ষতিকারক প্রভাবের ওপর আলোকপাত করে ভিডিও বার্তার মাধ্যমে ওই অনুষ্ঠানে ভাষণ দেন। সরকারের সক্রিয় ভূমিকার ওপর আলোকপাত করে তিনি বলেন, স্থানীয়, জাতীয়, আঞ্চলিক এমনকি বিশ্বস্তরে ধূমপান এবং তামাকজাত দ্রবের ক্ষতিকারক প্রভাব কমিয়ে আনতে বিভিন্ন সক্রিয় পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। জনস্বাস্থ্যের দিকে তাকিয়ে এই উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে বলে তিনি জানান। তাঁর ভাষণটি ইউটিউবে পাওয়া যাবে।

তামাকের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে অর্থনীতি, পরিবেশ এবং সামাজিক ক্ষেত্রে বর্তমান এবং আগামী প্রজন্মকে রক্ষা করতে ভারতের অবিচল দায়বদ্ধতার কথা তুলে ধরেছেন তিনি। তামাক নিয়ন্ত্রণ নিয়ে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংগঠনের নির্দেশিকা ভারত কঠোরভাবে রূপায়ণ করছে। এক্ষেত্রে নজরদারি এবং পরিচালনগত ব্যবস্থার ফলে সদর্থক ফলও পাওয়া যাচ্ছে বলে তিনি জানান। এক্ষেত্রে ভারতের জাতীয় তামাক নিয়ন্ত্রণ আইন ২০০৩ উল্লেখ করে তিনি বলেন, তামাক নিয়ন্ত্রণে ২০২৪-এ নানা ব্যবস্থা নেওয়া হয়েছে। দেশ জুড়ে জনসচেতনতা কর্মসূচিকে জোরদার করা হয়েছে। এর পাশাপাশি তামাকের প্রভাব মুক্ত শিক্ষা প্রতিষ্ঠান এমনকি তামাক মুক্ত গ্রাম গড়ে তোলার কাজ চলছে।

শিশু এবং যুবদের তামাকের বিষময় প্রভাব থেকে মুক্ত করতে ব্যাটমিন্টন তারকা পি ভি সিন্ধুকে তামাক বিরোধী দিবসে ব্র্যান্ড অ্যাম্বাসেডর করা হয়েছে। ভিডিও বার্তায় সিন্ধু, তামাকের বিরুদ্ধে সোচ্চার প্রতিরোধ গড়ে তুলতে সকলকে ঐক্যবদ্ধ হওয়ার কথা বলেন। আগামীদিনকে সুন্দর করে তুলতে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপনের আহ্বান জানিয়েছেন তিনি। তাঁর বার্তাটিও ইউটিউবে পাওয়া যাবে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রকের অতিরিক্ত সচিব শ্রীমতী ভি হেকালি জিমোমি বলেন, ভারত সরকার টিভি এবং চলচ্চিত্রের ক্ষেত্রে তামাক বিরোধী প্রচারে যে বিধিবদ্ধ নিয়ম রয়েছে, ২০২৩-এ তা গেজেট বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে ওটিপি প্ল্যাটফর্মও চালু করেছে। ভারতই হল বিশ্বের প্রথম দেশ ওটিটি মিডিয়া প্ল্যাটফর্ম সহ মাদক বিরোধী প্রচারে এই সর্বাত্মক ভূমিকা পালন করছে।

স্বাস্থ্য পরিষেবা দপ্তরের মহানির্দেশক অধ্যাপক ডঃ অতুল গোয়েল বলেন, তরুণ প্রজন্মকে তামাকের ক্ষতিকারক প্রভাব থেকে মুক্ত করতে উদ্ভাবনী কৌশল গ্রহণ করতে হবে। জনসচেতনতা গড়ে তুলতে তামাকের বিজ্ঞাপনের ওপর বিধিনিষেধ আরোপের ওপরও গুরুত্ব দেন তিনি।

ভারতে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা –হু’র ভারতে প্রতিনিধি ডঃ রোডেরিকো অরফিন তামাক নিয়ন্ত্রণে ভারতের নেতৃত্বের প্রশংসা করেন। ওটিটি মঞ্চে তামাক বিরোধী প্রচার সহ ই-সিগারেট নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে ভারতের গৃহীত পদক্ষেপের ভূয়সী প্রশংসা করেছেন তিনি।

চিকিৎসা প্রতিষ্ঠানগুলিতে তামাক বর্জন কেন্দ্র প্রতিষ্ঠার কার্যকরী নির্দেশিকা প্রকাশ করা হয়েছে। এর উদ্দেশ্য হল, চিকিৎসা ক্ষেত্রে পাঠরত ছাত্রছাত্রীদের তামাক বর্জন নিয়ে উৎসাহ যোগানো। ন্যাশনাল মেডিকেল কমিশনে নির্দেশিকা মাফিক স্নাতক স্তরের ছাত্রছাত্রীদের এক্ষেত্রে সর্বাত্মক ওষুধপত্রের ব্যাপারে প্রশিক্ষিত করে তোলা। অনুষ্ঠানে বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা আয়োজিত বিশ্ব তামাক বিরোধী দিবসে পুরস্কার প্রাপ্তদের সম্বর্ধনা দেওয়া হয়। তামাক নিয়ন্ত্রণে তাদের উল্লেখযোগ্য কাজের জন্য হু-এর পক্ষ থেকে বার্ষিক এই পুরস্কার প্রদান করা হয়ে থাকে।

স্বাস্থ্য ও পরিবার কল্যাণ মন্ত্রক অনলাইনে মাইগভ প্ল্যাটফর্মে ‘তামাক বর্জন শপথ’ ব্যবস্থা চালু করেছে। গত ৩১ মে থেকে এই তামাক বর্জন প্রচারাভিযানে সর্বাত্মক অংশগ্রহণকে উৎসাহ দেওয়া হচ্ছে।

ন্যাশনাল ওরাল হেল্থ কর্মসূচির আওতায় লেডি হার্ডিঞ্জ মেডিকেল কলেজের পক্ষ থেকে নির্মাণ ভবনে মুখের ভিতরের পরীক্ষা সহ তামাক বর্জন শিবিরের আয়োজন করা হয়

অতিরিক্ত ডিডিজি ডিটিইজিএইচএস ডঃ এল স্বস্তি চরণ, স্বাস্থ্য ও পরিবার মন্ত্রকের মাদক নিয়ন্ত্রণ সংক্রান্ত উপসচিব ডঃ পুনম মিনা সহ মন্ত্রকের পদস্থ আধিকারিকরা অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।