ওয়েব ডেস্ক; ২৮শে নভেম্বর : অ্যাপোলো ক্যান্সার সেন্টার্স (এসিসি’স) ফুসফুসের ক্যান্সারের যথাসময়-পূর্ব নির্ধারণের জন্য লাংলাইফ স্ক্রিনিং প্রোগ্রামের সূচনা করেছে। এই যুগান্তকারী উদ্ভাবনের লক্ষ্য হল ফুসফুসের ক্যান্সারের বিরুদ্ধে লড়াই করা, কেননা ভারতে ৮.১% ক্যান্সার-জনিত মৃত্যু ঘটে এই ফুসফুসের ক্যান্সার থেকে এবং সব ধরনের ক্যান্সারের মধ্যে ৫.৯% হল ফুসফুসের ক্যান্সার। যথাসময়-পূর্ব নির্ধারণ চিকিৎসার আরও ভালো পরিণামে সহায়তা করে এবং বেঁচে যাওয়ার হারও বাড়ায়।

ক্যান্সারের গবেষণার জন্য আন্তর্জাতিক এজেন্সি (আইএআরসি)-এর তৈরী করা ক্যান্সারের ঘটনা ও মরণশীলতা বিষয়ক গ্লোবোক্যান ২০২০–এর আনুমানিক হিসাব দেখায় যে ক্যন্সার-জনিত মৃত্যুর কারণগুলির মধ্যে শীর্ষস্থানে রয়েছে ফুফুসের ক্যান্সার, যেখানে ২০২০ সালে এই রোগের ফলে প্রায় ১.৮ মিলিয়ন (১৮%) মৃত্য ঘটেছে।

লাংলাইফ স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম সেইসব ব্যক্তিদের উপর লক্ষ্য স্থাপন করে যাদের ফুসফুসের ক্যান্সার হওয়ার ঝুঁকি সবচেয়ে বেশি যেমন: (i) ৫০ থেকে ৮০ বছর বয়সের মধ্যে থাকা লোকেরা, (ii) অ্যাসিম্পটোম্যাটিক (ফুসফুসের ক্যান্সারের কোনো চিহ্ন বা উপসর্গ না থাকা), (iii) ধূমপান করার উল্লেখযোগ্য ইতিহাস থাকা লোকেরা এবং (iv) পরিবারের ফুসফুসের ক্যান্সারের ইতিহাস আছে এমন লোকেরা।

কম-ডোজ দিয়ে গণনা করা টোমোগ্রাফি (এলডিসিটি)-এর মাধ্যমে আর্লি স্ক্রিনিং যথাসময়-পূর্ব নির্ধারণে সহায়তা করতে পারে এবং বেঁচে যাওয়ার হার উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করতে পারে। তবুও বেশি ঝুঁকিতে থাকা প্রায় ৮০% ব্যক্তিরা কখনও তাদের স্বাস্থ্যসেবা প্রদানকারীদের সাথে স্ক্রিনিংয়ের কথা আলোচনা করেন নি। যথাসময়ের পূর্বে রোগনির্ণয় করতে ও প্রাণ বাঁচাতে সক্ষম হতে ফুসফুসের ক্যান্সারের স্ক্রিনিংকে ঘিরে যোগাযোগ ও সচেতনতা বাড়ানো অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, বিশেষকরে জনসংখ্যার যে অংশ বেশি ঝুঁকিতে রয়েছে তাদের মধ্যে।

অ্যাপোলো ক্যান্সার সেন্টার, কলকাতার সিনিয়ার কনসালটেন্ট পালমোনোলজি, ডঃ অশোক সেনগুপ্ত বলেছেন, “সারা বিশ্বব্যাপী মারাত্মক ক্যান্সারগুলির মধ্যে অন্যতম হল ফুসফুসের ক্যান্সার, কিন্তু যথাসময়ের পূর্বে নির্ধারণ করলে বেঁচে যাওয়ার সম্ভাবনা অনেকটাই বেড়ে যায়। আমাদের লাং-লাইফ স্ক্রিনিং প্রোগ্রামের মাধ্যমে, আমাদের লক্ষ্য হল গোড়াতেই বেশি ঝুঁকিতে থাকা লোকেদের সনাক্ত করা। এটা করা হবে কম-ডোজের উন্নত সিটি প্রযুক্তি ব্যবহার করে কেননা এটা নিখুঁতভাবে রোগনির্ণয়ের সম্ভাবনা সর্বাধিক করার পাশাপাশি রেডিয়েশনের নীচে থাকার সময়ও ন্যূনতম করে। এই প্রোগ্রামটি বিশেষভাবে সেইসব ব্যক্তিদের জন্য প্রভাব ফেলে যারা অতীতে ধূমপান করেছেন বা এখনও করছেন, প্যাসিভ স্মোকিংয়ে উন্মুক্ত হয়েছেন, বা যাদের পরিবারের ফুসফুসের ক্যান্সারের ইতিহাস রয়েছে। চিকিৎসা করা যাবে এমন এক পর্যায়ে ফুসফুসের ক্যান্সার নির্ধারণ করে, আমরা রোগীদের হাতে চিকিৎসার আরও ভালো পরিণাম পাওয়ার এবং একটি আরও সুস্থ ভবিষ্যতের জন্য নতুন করে আশা করার ক্ষমতা দিই।”

অ্যাপোলো ক্যান্সার সেন্টার, কোলকাতার রেডিওলজির কনসালটেন্ট, ডঃ রেশমি চাঁদ বলেন, “অ্যাপোলো ক্যান্সার সেন্টারের লাং-লাইফ স্ক্রিনিং প্রোগ্রামের সূচনাকে ভারতে ফুসফুসের ক্যান্সারের আশঙ্কাজনকভাবে বেড়ে ওঠা নিয়ে কথা বলার ক্ষেত্রে একটা গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে চিহ্নিত করা যেতে পারে। এই সুদূরপ্রসারী স্ক্রিনিং প্রোগ্রামের সাথে, আমরা যথাসময়ের পূর্বে নির্ধারণ করার উপর মনোনিবেশ করি। কারণ এই পর্যায়েই কার্যকর চিকিৎসা ও আরোগ্যলাভের সম্ভাবনা অত্যন্ত বেশি। এই প্রোগ্রামে কম-ডোজের অত্যাধুনিক সিটি স্ক্যানকে উদ্দেশ্যসাধনের উপায় হিসেবে ব্যবহার করা হয়, তবে এই সিটি স্ক্যান প্রযুক্তি সত্ত্বেও রোগীর নিরাপত্তাকে অগ্রাধিকার দেওয়ার পাশাপাশি সঠিকভাবে যাতে রোগনির্ণয় করা হয় সেটাও নিশ্চিত করা হয়। একসাথে, আমরা শুধু ক্যান্সারের চিকিৎসাই করছি না এমনকি সময়ে হস্তক্ষেপ করা এবং ব্যক্তিগত চাহিদার সাথে মানানসই সামগ্রিক পরিচর্যা প্রদান করার মাধ্যমে জীবনের রূপান্তরসাধনও করছি।”

অ্যাপোলো ক্যান্সার সেন্টার, কোলকাতার মেডিকেল অঙ্কলজির ডিরেক্টর, ডঃ পি.এন. মহাপাত্র বলেন, “ফুসফুসের ক্যান্সার হল নিরব ঘাতক, এই রোগ প্রায়ই এমন সময় ধরা পড়ে যখন তা অনেকটা বেড়ে গেছে, তাই যথাসময়-পূর্ব নির্ধারণ একটা গুরুত্বপূর্ণ হস্তক্ষেপ। লাং-লাইফ স্ক্রিনিং প্রোগ্রামের সাথে, অ্যাপোলো ক্যান্সার সেন্টার ফুসফুসের ক্যান্সারের পরিচর্যায় এক যুগান্তকারী পদক্ষেপ নিয়েছে। এই প্রোগ্রাম প্রাথমিক পর্যায়েই রোগনির্ণয় করতে নিখুঁতভাবে রোগনির্ণয় ও রোগী-কেন্দ্রিক পরিচর্যাকে একসাথে নিয়ে এসেছে, যা বেঁচে যাওয়ার হার উল্লেখযোগ্যভাবে উন্নত করে। উদ্যমী স্বাস্থ্যসেবা যে জীবন বাঁচাতে পারে আমাদের এই উদ্যোগ তারই সাক্ষ্য বহন করে। এই প্রোগ্রাম রোগীদের আরোগ্যলাভের জন্য সবচেয়ে ভালো সম্ভাবনা প্রদান করে এবং ক্যান্সার চিকিৎসায় উৎকর্ষতাকে পুনরী সংজ্ঞায়িত করার প্রতি আমাদের যে অঙ্গীকার তাকে আরও সুদৃঢ় করে।”

অ্যাপোলো ক্যান্সার সেন্টার, কোলকাতার মেডিকেল সার্ভিসেসের ডিরেক্টর, ডঃ সুরিন্দর সিং ভাটিয়া বলেন, “আমরা ভারতের মধ্যে সর্বপ্রথম লাং-লাইফ স্ক্রিনিং প্রোগ্রাম চালু করতে পেরে গর্বিত। এটা একটা যুগান্তকারী উদ্যোগ যা অঙ্কলজি পরিচর্যায় অ্যাপোলো ক্যান্সার সেন্টারের নেতৃত্বের প্রতিফলন ঘটায়। আমাদের লক্ষ্য শুধু জীবন বাঁচানোই নয় বরং ব্যক্তিদের হাতে তাদের স্বাস্থ্য সম্বন্ধে জ্ঞান প্রদান করা ও নিজের স্বাস্থ্য নিয়ন্ত্রণ করার ক্ষমতা দেওয়া।”

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *