কলকাতা, ২৭ অক্টোবর: হৃদরোগ চিকিৎসার ক্ষেত্রে এক বড় সাফল্য মণিপাল হাসপাতাল, ঢাকুরিয়াতে । এখানে প্রথমবারের মতো এক ৮১ বছর বয়সী প্রবীণ রোগী, কলকাতার বাসিন্দা ও অবসরপ্রাপ্ত মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ার দুলাল কান্তি ঘোষ-এর শরীরে অত্যাধুনিক ডুয়াল-চেম্বার লিডলেস পেসমেকার বসানো হয়েছে। এই জটিল প্রক্রিয়াটি সম্পন্ন করেন মণিপাল হাসপাতাল, ঢাকুরিয়ার কনসালট্যান্ট – ইন্টারভেনশনাল কার্ডিওলজিস্ট, ডা. প্রদীপ ভৌমিক।
রোগী দীর্ঘদিন ধরে একাধিকবার অজ্ঞান হয়ে পড়া (সিনকোপ) ও শ্বাসকষ্টের সমস্যায় ভুগছিলেন। ইসিজি, হল্টার মনিটরিং, ইকোকার্ডিওগ্রাম ও অন্যান্য রুটিন রক্ত পরীক্ষার পর জানা যায়, তিনি সিক সাইনাস সিনড্রোম-এ আক্রান্ত — অর্থাৎ হৃদপিণ্ডের স্বাভাবিক ছন্দ নিয়ন্ত্রণকারী “সাইনাস নোড” ঠিকমতো কাজ করছে না। এর সঙ্গে যুক্ত ছিল গুরুতর ব্র্যাডিকার্ডিয়া, অর্থাৎ হৃদস্পন্দন স্বাভাবিকের তুলনায় অনেক ধীর। রোগীর বয়স বেশি হওয়া এবং ক্রিয়াটিনিনের মাত্রা উচ্চ থাকার কারণে, চিকিৎসক প্রচলিত পেসমেকার প্রতিস্থাপন বা ওপেন-হার্ট সার্জারির পরিবর্তে ডুয়াল-চেম্বার লিডলেস পেসমেকার ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নেন — যা সম্প্রতি ভারতে চালু হয়েছে।

এই আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর প্রক্রিয়াটি কোনো সার্জিক্যাল কাটাছেঁড়া ছাড়াই সম্পন্ন হয় এবং মাত্র ১৫ থেকে ৩০ মিনিটের মধ্যেই সফলভাবে শেষ হয়। সার্জারির পরের দিনই রোগীকে হাসপাতাল থেকে ছুটি দেওয়া হয় এবং বর্তমানে তিনি সম্পূর্ণ সুস্থ ও স্বাভাবিক জীবনযাপন করছেন।

ডা. প্রদীপ ভৌমিক বলেন, “এই মিনিমালি ইনভেসিভ পেসমেকারটি হৃদরোগ চিকিৎসায় এক নতুন অধ্যায়ের সূচনা করেছে, বিশেষত সেইসব বয়স্ক রোগীদের জন্য যাঁদের একাধিক শারীরিক সমস্যা রয়েছে। অস্ত্রোপচারের পর দুলালবাবুর কোনো রকম জটিলতা দেখা যায়নি, এবং তিনি এখন সম্পূর্ণ সুস্থ ও সক্রিয় জীবন কাটাচ্ছেন। পূর্বের সিঙ্গল-চেম্বার ক্যাপসুল পেসমেকারগুলিতে যে শ্বাসকষ্ট বা সীমিত পেসিং সাপোর্টের সমস্যা দেখা যেত, নতুন ডুয়াল-চেম্বার সিস্টেম তা পুরোপুরি দূর করেছে। পাশাপাশি, এই পদ্ধতিতে কোনো সেলাইয়ের প্রয়োজন নেই, সংক্রমণের ঝুঁকি অত্যন্ত কম এবং এর আয়ুষ্কাল প্রায় ২৫ বছর, যা দীর্ঘমেয়াদি হৃদরোগ সুরক্ষা দেয় ও প্রয়োজনে প্রতিস্থাপনের সুবিধাও রাখে।”

নিজের অভিজ্ঞতা জানিয়ে দুলাল কান্তি ঘোষ বলেন, “আমি প্রায় প্রতিদিন অজ্ঞান হয়ে পড়ার ও মাথা ঘোরা ভয়ের মধ্যে দিন কাটাচ্ছিলাম। এতে আমার স্বাভাবিক জীবন একেবারে ব্যাহত হচ্ছিল। মণিপাল হাসপাতাল, ঢাকুরিয়ায় ডা. প্রদীপ ভৌমিকের তত্ত্বাবধানে বেশ কয়েকটি পরীক্ষা-নিরীক্ষার পর জানা যায়, আমার হৃদযন্ত্রে সমস্যা রয়েছে এবং পেসমেকার প্রয়োজন। চিকিৎসকের পরামর্শে আমরা ডুয়াল-চেম্বার লিডলেস পেসমেকার বেছে নিই, এবং সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি খুবই নিরাপদ ও নির্বিঘ্নে সম্পন্ন হয়। আমি ডা. প্রদীপ ভৌমিক ও মণিপাল হাসপাতালের পুরো চিকিৎসক দলের প্রতি আন্তরিক কৃতজ্ঞতা জানাই। আজ আমি সম্পূর্ণ সুস্থ, আত্মবিশ্বাসী ও স্বাভাবিক জীবনে ফিরে এসেছি।”