শুভজিৎ মজুমদার, শুভাবরি ডিজিটাল ডেস্ক; ২৫ ফেব্রুয়ারী, কলকাতা:
তিনি নিজেই যেন ছিলেন একজন চলমান চিত্রনাট্য। তার তুলির টানে জন্ম চরিত্রগুলো আজও মনোরঞ্জন করে চলেছে আপামর বাঙালির। যিনি বাঙালিকে কার্টুন দেখতে শিখিয়েছিলেন, নন্টে ফন্টে- বাঁটুল দি গ্রেট তারই সৃষ্টি, তিনিই পদ্মশ্রী “নারায়ণ দেবনাথ”।
গত ১৮ জানুয়ারী ২০২২, তার মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ হয় গোটা শিল্প মহল। এবার তাঁর স্মৃতির উদ্দেশ্যে ৮৫ ফুটের দেওয়াল চিত্র তুলে ধরল বেহালা ফকির পাড়ার উত্তরসূরী ক্লাব সংগঠন।
নারায়ণ দেবনাথের বিখ্যাত কার্টুন চরিত্র বাঁটুল দি গ্রেট, বাহাদুর বিল্লি, হাঁদা ভোঁদা ইত্যাদি বহু কার্টুন চরিত্রের দ্বারা শিল্পী শঙ্কর ঘোষ সাজিয়ে তুলেছেন ৮৫ ফুটের দেওয়াল। শিল্পী জানালেন , “নারায়ণ বাবু বাঙালিকে কার্টুন দেখতে শিখিয়েছেন। তাঁর প্রয়াণের সাথে সাথে যেন তিনি তার চরিত্র গুলোকেও নিয়ে চলে গেলেন। তবে আমি বিশ্বাস করি, তার সৃষ্টি কোনো দিন মুছবে না। তাই তার স্মরণে আমার এই প্রচেষ্টা।”
কার্টুন এবং গ্রাফিটিকে এক করে এত বড় মাত্রায় তুলে ধরার মতো কাজ কলকাতার বুকে হয়তো কম হয়েছে। শিল্পীর কাছে এটা যেন এক নতুন বিপ্লব। আনুমানিক ৫০ টিরও বেশি ক্যারেক্টারকে তুলে ধরা হয়েছে সমগ্র দেওয়াল জুড়ে।
চিরকালের স্বল্পভাষী ও প্রচারবিমুখ এই শিল্পী বছর চারেক আগে পর্যন্তও সমান দক্ষতায় এঁকে গিয়েছেন ‘হাঁদা-ভোঁদা’, ‘নন্টে-ফন্টে’, ‘বাঁটুল দি গ্রেট’-এর নানা কাণ্ডকারখানা। শিল্পী শঙ্কর ঘোষ আক্ষেপ করে বলেছেন- ” এটা ঠিক যে নারায়ণ বাবু প্রচারের আলোয় আসতে পছন্দ করতেন না । ‘এই বয়সেও অসুস্থ শরীরে কেন টানা এঁকে যাচ্ছেন?’একবার প্রশ্নের জবাবে নারায়ণবাবু জবাব দিয়েছিলেন, ‘ছোটদের খুব ভালোবাসি। তাই, তাঁদের জন্য তুলি-কলম ছাড়তে পারিনি।’ আর তার জেরেই নন্টে-ফন্টে, বাঁটুল আর তার দুই সাগরেদ ভজা-গজা-লম্বকর্ণদের কীর্তি ছাড়াও পাঠক পেয়েছে বাহাদুর বিল্লি, ডানপিটে খাঁদু আর তার কেমিক্যাল দাদু, শুঁটকি মুটকি, পটলা দ্য ম্যাজিশিয়ানের মতো মনমাতানো সব কমিকস্।
ক্লাবের সদস্যরা বলেছেন, এই কাজটা করানোর একটাই উদ্দেশ্য, পথে যেতে যেতে মানুষ যখন এটা দেখবে তারা একবার অন্তত সেই সব মুহূর্তে গুলোকে উপভোগ করবে এবং তাদের স্মৃতির নারায়ণ দেবনাথ আবার জীবন্ত হয়ে উঠবে। তারা চান মানুষ আসুক এবং এই সৃষ্টির আনন্দের মধ্যে নিজেদের সামিল করুক। যাতে নারায়ণ দেবনাথের কার্টুন নতুন প্রজন্মের জীবনেও প্রাসঙ্গিক হয়ে থেকে যায়।।