ওয়েব ডেস্ক; ৩১ মে: প্রতিরক্ষা মন্ত্রী রাজনাথ সিং বলেছেন, অপারেশন সিঁদুর কেবল ভারতের সামরিক শক্তির প্রকাশই নয়, সন্ত্রাসবাদের বিরুদ্ধে ভারতের সম্মুখ আক্রমণ, পাকিস্তান আবার কোনও দুরাচার করলে তাদের ভারতের নৌশক্তির আক্রমণের মুখে পড়তে হবে। দেশে তৈরি প্রথম যুদ্ধ বিমান বহনকারী জাহাজ আইএনএস বিক্রান্তে নৌ আধিকারিক ও নৌ রণতরী চালকদের উদ্দেশ্যে ভাষণে এই ঘোষণা করেছেন তিনি। গোয়া উপকূলে এই রণতরীতে দাঁড়িয়ে অপারেশন সিঁদুর-এ ভারতীয় নৌবাহিনীর নীরবে দেশ সেবার উচ্ছ্বসিত প্রশংসা করেন তিনি। তিনি বলেন, আমাদের সশস্ত্র রণতরীগুলি সতর্ক নজর রেখেছিল পাকিস্তানী নৌবাহিনীর ওপরে। তারা বেগতিক কিছু করলেই এর ফলাফল পাকিস্তানী নৌসেনাকে ভুগতে হত। তিনি পুনরায় পাকিস্তানকে সতর্ক করে দিয়ে বলেন, পাকিস্তান কোনওরকম কুদৃষ্টি দেখানোর চেষ্টা করলে নতুন দিল্লির প্রত্যুত্তর কী হবে তা ভারতীয় নৌ বাহিনীর ওপর ছেড়ে দেওয়া হবে।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, পাকিস্তানের উচিত সন্ত্রাসবাদে প্ররোচনার মতো বিপজ্জনক খেলা থেকে সরে আসা। স্বাধীনতার সময় থেকে তারা তা করে আসছে।সীমান্তের উভয় পারে ভারতে কোনরকম সন্ত্রাসবাদী কাজে পাকিস্তান ভবিষ্যতে প্ররোচনা দিলে তার ফলাফল তাদের ভুগতে হবে। সন্ত্রাসবাদের ভীতি প্রদর্শনের প্রক্রিয়া সমূলে উপড়ে দেওয়া হবে বলে তিনি জানান।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, ভারত বিরোধী কার্যকলাপে পাকিস্তান প্রকাশ্যে মদত দিয়ে আসছে। যে কোনও রকম সন্ত্রাসবাদী কাজের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে ভারত কোন দ্বিধা করবে না। সন্ত্রাসবাদের হাত থেকে দেশবাসীকে রক্ষা করতে ভারতের অধিকারকে সারা বিশ্ব স্বীকৃতি দিয়েছে বলে তিনি জানান। তিনি বলেন পাকিস্তান হল সন্ত্রাসের আঁতুড়ঘর এবং সেদেশের মাটিকে সন্ত্রাসবাদীরা ব্যবহার করছে। হাফিজ সৈয়দ এবং মাসুদ আজহারের মতো সন্ত্রাসবাদীদের ভারতের হাতে তুলে দেওয়ার তিনি দাবি জানিয়েছেন। প্রতিরক্ষা মন্ত্রী বলেন, মুম্বাই আক্রমণে অভিযুক্ত তাহাউর রানাকে সম্প্রতি ভারতের হাতে তুলে দেওয়া হয়েছে। হাফিজ সৈয়দও মুম্বাই হামলায় দোষী, তারও এই অপরাধের বিচার হওয়া দরকার।
আলোচনার জন্য বার বার পাকিস্তানের অনুরোধ প্রসঙ্গে প্রতিরক্ষা মন্ত্রী পরিস্কার ভাষায় জানান, আলোচনা হলে তা কেবলমাত্র সন্ত্রাসবাদ এবং পাক অধিকৃত কাশ্মীর নিয়েই হবে। পাকিস্তান যদি আলোচনার বিষয়টিকে গুরুত্ব দিয়ে দেখে তাহলে তাদের উচিত হাফিজ সৈয়দ এবং মাসুদ আজহারের মতো সন্ত্রাসবাদীদের বিচারের জন্য ভারতের হাতে তুলে দেওয়া। তিনি পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, অপারেশন সিঁদুর এখনও শেষ হয়নি, এটা কেবলমাত্র একটি বিরতি, একটি সতর্কতা। পাকিস্তান পুনরায় ভুল করলে ভারতের জবাব আরও কঠোর হবে বলে তিনি জানান।
সেনা, বিমান বাহিনীর কর্মীদের সঙ্গে তাঁর আলোচনা, অতঃপর অপারেশন সিঁদুর পরবর্তী নৌ যোদ্ধাদের সঙ্গে তাঁর আলোচনায় রাজনাথ সিং স্পষ্টতই সন্তোষ ব্যক্ত করে বলেন, ভূমিতে, আকাশে অথবা সাগরে সব জায়গাতেই যে কোনও পরিস্থিতির মোকাবিলায় ভারত প্রস্তুত। গোয়ার মুক্তিতে আইএনএস বিক্রান্ত-এর পুরনো সংস্করণের গুরুত্বপূর্ণ অবদানের কথা স্মরণ করে তিনি বলেন, ১৯৬১ সাল থেকে ভারতীয় নৌবাহিনীর কাজে যুদ্ধ বিমানবাহী এই রণতরীকে কাজে লাগানো হয়েছে। বর্তমানে তার নব সংস্করণ সম্পূর্ণ দেশীয়।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী তাঁর ভাষণে বলেন, বর্তমানে যুদ্ধ বুলেট আর বম্ব দিয়ে হয় না। হয় সাইবার স্পেস, কৌশলগত প্রযুক্তি এবং ডেটা পরিচালন নির্ভরতার মাধ্যমে। এই সমস্ত ক্ষেত্রেই ভারতীয় নৌবাহিনী অনেক এগিয়ে বলে তিনি জানান। প্রতিরক্ষা মন্ত্রীর সঙ্গে উপস্থিত ছিলেন নৌবাহিনীর প্রধান অ্যাডমিরাল দীনেশ কে ত্রিপাঠী, পূর্বাঞ্চল নৌ কমান্ডের ফ্ল্যাগ অফিসার কম্যান্ডিং ইন চিফ, ভাইস অ্যাডমিরাল সঞ্জয় জে সিং প্রমুখ।
প্রতিরক্ষা মন্ত্রী গোয়া পৌঁছোন ২৯ তারিখ। সেখানে তাঁকে গার্ড অফ অনার দেওয়া হয়। অপারেশন সিঁদুরে অংশ নেওয়া নৌ সেনা জওয়ানদের সঙ্গেও গোয়ায় পৌঁছে তিনি কথা বলেন।