ওয়েব ডেস্ক; ১০ মে: প্রকৃতির জালগুলি যতটা জটিল দেখায় তার থেকেও অনেক বেশি জটিল। যদিও মাকড়সা ভয়ানক শিকারী হিসাবে পরিচিত, ভারত থেকে একটি নতুন গবেষণা তাদের অন্য একটি অপ্রকাশিত দিক উন্মোচন করেছে – যা প্রকাশ করছে মাকড়সাদের থেকেও ক্ষুদ্র এবং অদেখা প্রতিপক্ষ রয়েছে।

ডঃ কে রাজমোহনের নেতৃত্বে রূপম দেবনাথ, ভি সুষমা এবং ডঃ কে পি দীনেশের সমন্বয়ে গঠিত জুলজিক্যাল সার্ভে অফ ইন্ডিয়া (জেডএসআই)- এর একটি গবেষকদল সরাসরি মাকড়সার ডিমের কোষ থেকে মাকড়সা-পরাশ্রয়ী গোষ্ঠীগুলি বিষয়ে রহস্যভেদের জন্য ডিএনএ মেটাবারকোডিং প্রয়োগ করে একটি যুগান্তকারী বৈজ্ঞানিক সাফল্য অর্জন করেছে। বিজ্ঞান সাময়িকী ‘সায়েন্টিফিক রিপোর্টস’-এ প্রকাশিত তাদের অগ্রণী গবেষণাটি উচ্চ-ক্রমের অনুবর্তিতা ব্যবহার করে এই গোষ্ঠীগুলি সম্পর্কে রহস্যভেদের বিষয়ে বিশ্বব্যাপী প্রথম প্রচেষ্টা চিহ্নিত করে।

ডিএনএ মেটাবারকোডিংয়ের মাধ্যমে, গবেষণায় মাকড়সার ডিমের প্রশ্রয়, যেমন, ইদ্রিস, ওডোন্টাকোলাস এবং বিয়াস প্রজাতিগুলি পুনরুদ্ধার করা হয়েছিল। এই গোষ্ঠীগুলি তাদের সূক্ষ্ম আকারের জন্য সাধারণত অবহেলিত হয়ে থাকে – প্রায়শই এগুলি হয় এক মিলিমিটারেরও কম – বিশদ লালন-পালন বা মাইক্রোস্কোপে মাধ্যমে পরীক্ষায় বিশেষভাবে লক্ষ্যবস্তু না হলে তাদের চিহ্ণিত করা অত্যন্ত কঠিন হয়ে যায়।

গবেষকদলটিকে অভিনন্দন জানিয়ে জেডএসআই-এর ডিরেক্টর ডঃ ধৃতি বন্দ্যোপাধ্যায় বলেন, “জীবনের জটিল জালকে বোঝার মাধ্যমে স্থায়িত্ব শুরু হয়। এই যুগান্তকারী কাজটি ভারতীয় বিজ্ঞানের জন্য একটি গর্বের মুহূর্ত। পরিবেশের গুপ্তসম্পর্কগুলি অন্বেষণ করতে ডিএনএ মেটাবারকোডিংয়ের মতো আধুনিক ব্যবস্থা নিয়োগ করা জেডএসআইতে অত্যাধুনিক জীববৈচিত্র্য গবেষণায় আমাদের দায়বদ্ধতা প্রতিফলিত করে।

ডঃ কে রাজমোহনা বলেন, “ডিএনএ মেটাবারকোডিং এমন একটি ব্যবস্থা যা আমাদের কেবল সনাতনী লালন-পালনের উপর নির্ভর না করে একটি নমুনার সঙ্গে যুক্ত জীবের সম্পূর্ণ প্রজাতি উন্মোচনে সাহায্য করে। যাইহোক, এটির আসল শক্তি উপলব্ধি সম্ভব যখন এটি প্রচলিত পদ্ধতির দ্বারা স্থাপিত শক্তিশালী ভিত্তির উপর নির্মিত হয় যা হলো বিশদ আকৃতিবিদ্যা, ঐতিহ্যগত লালন-পালন পদ্ধতি এবং ধ্রুপদী ডিএনএ বারকোডিং। একবার এই স্তম্ভগুলি শক্তিশালী হয়ে গেলে, ডিএনএ মেটাবারকোডিং পরিবেশগত আদানপ্রদান এবং জীববৈচিত্র্যের আরও গভীর ও সঠিক অন্তর্দৃষ্টি দিতে পারে।

গবেষণার সঙ্গে জড়িত গবেষক মিঃ রূপম দেবনাথ বলেন, “ডিএনএ মেটাবারকোডিং ব্যবহার করে, আমরা শুধু পরিচিত পরাশ্য়ী গোষ্ঠীগুলি চিহ্ণিত করতে সক্ষম হইনি, প্রচলিত কৌশলগুলি ব্যবহার করে আবৃত দিকগুলিকে উন্মোচন করতে সক্ষম হয়েছি। এ যেন পুরো অদেখা জগৎ থেকে পর্দা খুলে ফেলার মতো”।

মিসেস ভি সুষমা বলেন, “এই কাজটি কেবল জীববৈচিত্র্যকে নথিভুক্ত করতে সাহায্য করে না পরিবেশগত সংযোগগুলির আশ্চর্যজনক জটিলতাও প্রকাশ করে। মাকড়সার ডিমের কোষের অভ্যন্তরে অ্যাফানোগমাসের মতো অপ্রত্যাশিত শ্রেণীর চিহ্ণিতকরণ প্রকাশ করে যে, প্রকৃতির সম্পর্কগুলি আমরা প্রায়শই যা অনুমান করি তার চেয়ে ঢের বেশি জটিল এবং গতিময়। অ্যাফানোগমাস সরাসরি মাকড়সার পুষ্টি শৃঙ্খলের সঙ্গে যুক্ত নাও হতে পারে, তবে, সমসাময়িক পুষ্টি সংযোগগুলির সঙ্গে যুক্ত। এটি জীববৈচিত্র্য গঠনের জটিল পথগুলি এবং আপাতদৃষ্টিতে আনুষঙ্গিক ঘটনাগুলি পাঠের গুরুত্বকে তুলে ধরে।

গবেষকদলটি দুই ও তার বেশি ডিএনএ সমাধান বিশ্লেষণ করেছে, যার ফলে ২৪টি আর্থ্রোপড শ্রেণী চিহ্ণিত হয়েছে, যার মধ্যে ১৪ টি সরাসরি আশ্রয়দাতা-পরাশ্রয়ী গোষ্ঠীর প্রতিনিধিত্ব করে। তাঁরা মা মাকড়সা দ্বারা পরিবাহিত শিকারের বস্তু- সহ বিস্তৃত পুষ্টি আদানপ্রদান চিহ্ণিত করতে ডিএনএ মেটাবারকোডিংয়ের ক্ষমতাও প্রকাশ করেছিলেন খাদ্যজাল আকৃতির একটি সর্বাঙ্গীন চেহারার হদিশ দিয়ে।

ডাঃ কে পি দীনেশের বক্তব্য অনুযায়ী, “আমাদের ভবিষ্যতের প্রচেষ্টা পরজীবী বোলতা এবং মাকড়সা উভয়ের জন্য ডিএনএ বারকোড লাইব্রেরিকে শক্তিশালী করার দিকে মনোনিবেশ করবে। একটি বিস্তৃত লাইব্রেরি বাস্তুতন্ত্রের স্বাস্থ্যের আরও সঠিক দিশা এবং দীর্ঘমেয়াদী পর্যবেক্ষণের পথ উন্মুক্ত করবে”।

এই সাফল্য শুধু ভারতীয় বিজ্ঞানীদের সার্বিক পরিবেশগত গবেষণাকে ইঙ্গিত করে না, প্রকৃতির ভঙ্গুর এবং চিত্তাকর্ষক সংযোগগুলির আবৃত পথগুলিকে অন্বেষণ, সংরক্ষণ এবং বোঝার জন্য আকর্ষণীয় নতুন পথও উন্মুক্ত করে।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *