ওয়েব ডেস্ক; ২০ জানুয়ারি : বাণিজ্য এবং শিল্পমন্ত্রী পীযূষ গোয়েল ব্রাসেল্স-এ ১৮ থেকে ১৯ জানুয়ারি ইউরোপীয় বাণিজ্য ও অর্থনৈতিক নিরাপত্তা আয়ুক্ত মনস সেফকোভিচ-এর সঙ্গে দেখা করেন এবং তাঁদের মধ্যে শীর্ষস্তরের আলোচনা হয়। এই প্রথম দুই নেতার মধ্যে ব্যক্তিগত স্তরে বৈঠক হল। এর আগে ২০২৪-এর ডিসেম্বরে ভিডিও কনফারেন্স হয়েছিল। আলোচনায় একে অপরের সংবেদনশীলতার প্রতি শ্রদ্ধা ও বিবেচনা প্রদর্শন করেন। আলোচনার লক্ষ্য ছিল বাণিজ্য এবং লগ্নিতে ভারত ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের কৌশলগত কর্মসূচির জন্য একটি নতুন কাঠামো গঠন।

মন্ত্রী ২০৪৭-এর মধ্যে ভারতকে উন্নত দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে প্রধানমন্ত্রী মোদী সরকারের প্রতিশ্রুতির কথা জানান। গোয়েল ভারত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে পারস্পরিক সুবিধাজনক অংশীদারিত্ব গড়তে ৬টি বিস্তারিত নীতির কথা বলেন।

প্রথম, ভারত গণতন্ত্র, আইনের শাসন এবং স্বাধীন বিচার বিভাগের অভিন্ন মূল্যবোধের ভিত্তিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কাজ করবে। এমন একটি অর্থনৈতিক সম্পর্ক তৈরি হবে যার বাজারমূল্য বর্তমান হিসেবে ২৪ ট্রিলিয়ন ডলারের বেশি, যা ভারত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের ২০০ কোটি মানুষকে কাছাকাছি আসার অভূতপূর্ব সুযোগ করে দেবে।

দ্বিতীয়, ভারত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে বাণিজ্যিক অর্থবহ ব্যবসায়িক কর্মসূচি তৈরি করবে, যা হবে স্বচ্ছ এবং সমতার ভিত্তিতে। মাশুল এবং মাশুল নয় এমন বাধাগুলি সরানো হবে সরলীকরণ এবং প্রতিযোগিতামূলক ব্যয় সংকোচের মাধ্যমে দুই পক্ষের বাণিজ্যের সুবিধার জন্য। বিশেষ করে ছোট ও মাঝারি সংস্থা, কৃষক এবং মৎস্যজীবিদের জন্য।

তৃতীয়, প্রধানমন্ত্রীর “জিরো ডিফেক্ট” এবং “জিরো এফেক্ট” উৎপাদন ক্ষমতার জন্য আহ্বানের সূত্রে ভারতকে উচ্চগুণমানসম্পন্ন পণ্যের বাজার নির্মাণ করার উদ্যোগে ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কাজ করা হবে প্রায়োগিক সেরা পন্থা, মানের সমতা, আদান-প্রদানের জন্য এবং এইসব লক্ষ্য পূরণে পারস্পরিক প্রক্রিয়া গঠনে।

চতুর্থ, ভারত ইউরোপীয় ইউনিয়নের সঙ্গে কাজ করবে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি নির্মাণ, গুরুত্বপূর্ণ কাঁচামাল প্রস্তুত এবং সুদৃঢ় সরবরাহ শৃঙ্খল নির্মাণের জন্য, যাতে বাজার বহির্ভূত অর্থনীতির ওপর নির্ভরতা হ্রাস পায় এবং ভারত এবং ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে নিবিড় অর্থনৈতিক যোগাযোগ গড়ে ওঠে।

পঞ্চম, পরস্পরের উন্নয়নের স্তর এবং অভিন্ন কিন্তু বৈশিষ্ট্যপূর্ণ দায়িত্বের নীতিকে মাথায় রেখে ন্যায্য পদ্ধতিতে বাণিজ্য এবং সুস্থায়ী উন্নয়ন ক্ষেত্রে সহযোগিতা গড়ে তোলা হবে।

ষষ্ঠ, প্রযুক্তির উন্নয়নে নেতৃত্বদানে এবং তরুণ, প্রত্যাশী এবং উচ্চ মেধার মানুষের দেশ হিসেবে ভারত পারস্পরিক উন্নয়ন এবং বৃদ্ধিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নকে অংশীদার করে তুলতে একটি সেতুর সন্ধান করবে।

একটি নতুন ভারত-ইউরোপীয় ইউনিয়ন কৌশলগত কর্মসূচি নির্মাণ করার লক্ষ্যে দুই নেতা দুই পক্ষকেই রাজনৈতিক দিকনির্দেশ করেন, যাতে বাণিজ্য এবং লগ্নির জন্য পারস্পরিক সুবিধা পাওয়া যায় এবং আন্তর্জাতিক সমস্যাগুলির মোকাবিলায় দ্রুত শক্তিশালী এফটিএ তৈরি করা যায়। দুই নেতা ভারত-ইউরোপীয় ইউনিয়ন ট্রেড অ্যান্ড টেকনোলজি কাউন্সিল (টিটিসি)-এর বাণিজ্য ও বিনিয়োগ গোষ্ঠীর অগ্রগতির পর্যালোচনা করেন এবং বিভিন্ন বিষয়ের সমাধান করতে ও একটি পথচিত্র তৈরি করতে তাঁরা দুই পক্ষের মধ্যে শীর্ষস্থানীয় আধিকারিক স্তরে এবং মন্ত্রী পর্যায়ে নিয়মিত আলোচনা চালিয়ে যেতে সম্মত হন। বৈঠকে যোগ দেন দুই পক্ষের শীর্ষস্থানীয় আধিকারিকরা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *