ওয়েব ডেস্ক; ২৩ এপ্রিল : খাদি অ্যান্ড ভিলেজ ইন্ডাস্ট্রিজ ক্ষেত্র যা দেশে আত্মনির্ভরতার মনোভাবকে সক্ষম করে তুলেছে তা গত ১১ বছরে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর দূরদর্শী নেতৃত্বে এবং অণু, ক্ষুদ্র এবং মাঝারি শিল্প মন্ত্রকের পথনির্দেশে নতুন উচ্চতায় পৌঁছেছেই শুধু তাই নয়, কোটি কোটি গ্রামবাসীর জীবনে নতুন আশার আলো এনেছে। পূজ্য বাপুর উত্তরাধিকারবাহী খাদি শুধুমাত্র একটি বস্ত্র নয়, ‘এক ভারত শ্রেষ্ঠ ভারত’-এর প্রতীক হয়ে উঠেছে। সোমবারে নতুন দিল্লিতে রাজঘাটে কেভিআইসি-র সদর দপ্তরে ২০২৪-২৫ অর্থ বছরের জন্য খাদি অ্যান্ড ভিলেজ ইন্ডাস্ট্রিজের প্রাথমিক হিসেব প্রকাশ করে একথা বলেছেন কেভিআইসি-র চেয়ারম্যান মনোজ কুমার। তিনি জানিয়েছেন যে, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে উৎপাদন, বিক্রয় এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে কেভিআইসি রেকর্ড করেছে। গত ১১ বছরে বিক্রয়ে ৪৪৭ শতাংশ, উৎপাদনে ৩৪৭ শতাংশ এবং কর্মসংস্থান সৃষ্টিতে ৪৯.২৩ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটেছে। ২০১৩-১৪ বছরের তুলনায় ২০২৩-২৪ অর্থ বছরে বিক্রয়ে ৩৯৯.৬৯ শতাংশ, উৎপাদনে ৩১৪.৭৯ শতাংশ বৃদ্ধি ঘটেছে।

চেয়ারম্যান মনোজ কুমার আরও জানিয়েছেন, কেভিআইসি-র এই উল্লেখযোগ্য অবদান ২০৪৭-এর মধ্যে ‘বিকশিত ভারত’-এর সংকল্প সাকার করতে এবং বিশ্বে ভারতকে তৃতীয় বৃহত্তম অর্থনীতি করে তুলতে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নেবে। তিনি এই ঐতিহাসিক সাফল্যের জন্য কৃতিত্ব দেন পূজ্য বাপুর অনুপ্রেরণা, প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদীর গ্যারান্টি, এমএসএমই মন্ত্রকের নির্দেশনা এবং দেশের দুর্গম গ্রামগুলিতে কর্মরত কোটি কোটি কর্মীর নিরলস কঠোর পরিশ্রমকে। কেভিআইসি-র চেয়ারম্যান জানান, ২০১৩-১৪-য় উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ২৬,১০৯.০৭ কোটি টাকা, ২০২৪-২৫-এ তা চারগুণ বেড়ে হয়েছে ১,১৬,৫৯৯.৭৫ কোটি টাকা। অন্যদিকে, ২০১৩-১৪-য় বিক্রয়ের পরিমাণ ছিল ৩১,১৫৪.১৯ কোটি টাকা, তা ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে প্রায় পাঁচগুণ বেড়ে হয়েছে ১,৭০,৫৫১.৩৭ কোটি টাকা যা এযাবৎ সর্বোচ্চ।

সংবাদমাধ্যমের কাছে তিনি বলেন, গত ১১ বছরে এই অভূতপূর্ব বৃদ্ধি লক্ষ্য করা গেছে খাদি বস্ত্র উৎপাদনেও। ২০১৩-১৪-য় উৎপাদনের পরিমাণ ছিল ৮১১.০৮ কোটি টাকা, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে সাড়ে চারগুণ বেড়ে হয়েছে ৩,৭৮৩.৩৬ কোটি টাকা – যা এপর্যন্ত সেরা। খাদি কাপড়ের বিক্রিও বেড়েছে অনেকটাই। ২০১৩-১৪-য় বিক্রয়ের পরিমাণ ছিল মাত্র ১,০৮১.০৪ কোটি টাকা, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে সাড়ে ছয়গুণ বেড়ে হয়েছে ৭,১৪৫.৬১ কোটি টাকা। তিনি বলেন, বড় মঞ্চে প্রধানমন্ত্রী শ্রী নরেন্দ্র মোদী খাদির প্রসারে যে উদ্যোগ নিয়েছেন তার বড় প্রভাব পড়েছে খাদি কাপড়ের বিক্রিতে।

কেভিআইসি-র উদ্দেশ্য সম্পর্কে জানাতে গিয়ে তিনি বলেন, মূল উদ্দেশ্য গ্রামাঞ্চলে যত বেশি কর্মসংস্থানের সুযোগ তৈরি করা। এই ক্ষেত্রেও গত ১১ বছরে রেকর্ড হয়েছে। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে যেখানে পৌনঃপুনিক কর্মসংস্থানের পরিমাণ ছিল ১.৩০ কোটি তা ২০২৪-২৫-এ বেড়ে হয়েছে ১.৯৪ কোটি। নতুন দিল্লির খাদি অ্যান্ড ভিলেজ ইন্ডাস্ট্রিজ ভবনে ব্যবসারও অভূতপূর্ব বৃদ্ধি ঘটেছে। ২০১৩-১৪ অর্থ বছরে ভবনের লেনদেনের পরিমাণ ছিল ৫১.০২ কোটি টাকা, ২০২৪-২৫ অর্থ বছরে তা প্রায় দ্বিগুণ বেড়ে হয়েছে ১১০.০১ কোটি টাকা। প্রধানমন্ত্রী এমপ্লয়মেন্ট জেনারেশন প্রোগ্রাম (পিএমইজিপি) কর্মসূচির সূচনা থেকে ১০,১৮,১৮৫টি ইউনিট স্থাপিত হয়েছে। তার জন্য ভারত সরকার ৭৩,৩৪৮.৩৯ কোটি টাকার ঋণের ক্ষেত্রে ২৭,১৬৬.০৭ কোটি টাকার ভর্তুকি দিয়েছে। এপর্যন্ত ৯০,০৪,৫৪১ জন পিএমইজিপি-র মাধ্যমে কাজ পেয়েছেন।

তিনি বলেন, গ্রামোদ্যোগ বিকাশ যোজনা কর্মসূচিতে গ্রামাঞ্চলে সর্বোচ্চ সংখ্যক মানুষকে কর্মসংস্থান দিতে কেভিআইসি ২০২১-২২ অর্থ বছরে ২৫.৬৫ কোটি টাকার বাজেটের দ্বিগুণেরও বেশি ধার্য করে ২০২৫-২৬ অর্থ বছরে ৬০ কোটি টাকা করেছে। এপর্যন্ত ৩৯,২৪৪টি বিদ্যুৎচালিত কুমোরের চাক, ২,২৭,০৪৯টি মৌমাছির বাক্স, ২,৩৪৪টি স্বয়ংক্রিয় পেডালচালিত ধূপকাঠি তৈরির যন্ত্র, ৭,৭৩৫টি জুতো তৈরি এবং সারানোর যন্ত্র, ৯৬৪টি কাগজের থালা ও বাটি তৈরির যন্ত্র, ৩,৪৯৪টি এসি, মোবাইল, সেলাই, ইলেক্ট্রিক সারাই, কল সারাইয়ের যন্ত্রপাতি, ৪,৫৫৫টি কাঠের জিনিস তৈরির যন্ত্রের পাশাপাশি ২,৩৬৭টি গুড়, তেলের ঘানি এবং তেঁতুল প্রক্রিয়াকরণের যন্ত্র বিতরণ করা হয়েছে গ্রামোদ্যোগ বিকাশ যোজনায়। গত ৩টি অর্থ বছরের হিসেব অনুযায়ী ২০২২-২৩-এ ২২,২৮৪টি, ২০২৩-২৪-এ ২৯,৮৫৪টি এবং ২০২৪-২৫-এ সর্বোচ্চ ৩৭,২১৮টি যন্ত্র এবং উপাদান বিতরণ করা হয়েছে।

নারীর ক্ষমতায়ন সম্পর্কে তিনি আরও জানান, গত ১০ বছরে কেভিআইসি-র দপ্তরের অধীন ১৮টি এবং অন্য ১৭টি প্রশিক্ষণ কেন্দ্রের মাধ্যমে ৭,৪৩,৯০৪ জনকে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়েছে, যার মধ্যে ৫৭.৪৫ শতাংশ অর্থাৎ ৪,২৭,৩৯৪ জন মহিলা। এছাড়া ৫ লক্ষ খাদি কর্মীর ৮০ শতাংশই মহিলা। গত ১১ বছরে খাদি কর্মীদের মজুরি ২৭৫ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে। গত তিন বছরে এই বৃদ্ধির হার ১০০ শতাংশ।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *