ওয়েব ডেস্ক; ১৩ এপ্রিল : ভারতের ইতিহাস, ঐতিহ্য ও শিল্পের মেলবন্ধন ঘটিয়েছে ভারতীয় সিল্ক। কাঞ্চিপুরম ও বেনারসির মতো সিল্ক শাড়ি প্রবাদপ্রতীম হয়ে উঠেছে। রেশম কীট থেকে সিল্ক তৈরি হয়, এই কীটেরা তুঁতের পাতা খায়। এগুলি গুটি তৈরি করে, যা পরে সিল্কের সুতোয় পরিণত হয় এবং কাপড়ে বোনা হয়। ভারত বিশ্বে সিল্কের দ্বিতীয় বৃহত্তম উৎপাদক ও ভোক্তা। ২০১৭-১৮ সালে ভারতে কাঁচা রেশমের উৎপাদন ছিল ৩১ হাজার ৯০৬ টন, ২০২৩-২৪ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৩৮ হাজার ৯১৩ টন। রেশম চাষের এলাকা ২০১৭-১৮ সালে ছিল ২ লক্ষ ২৩ হাজার ৯২৬ হেক্টর, ২০২৩-২৪ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২ লক্ষ ৬৩ হাজার ৩৫২ হেক্টর। রেশম ও রেশমজাত পণ্যের রপ্তানির পরিমাণ ২০১৭-১৮ সালে ছিল ১৬৪৯.৪৮ কোটি টাকা, ২০২৩-২৪ সালে তা বেড়ে হয়েছে ২০২৭.৫৬ কোটি টাকা।
ভারতের কাঞ্চিপুরম, ভাগলপুর তসরের মতো শাড়িগুলি শুধু শাড়ি নয়, এগুলি একেকটি গল্পের মতো। খাঁটি তুঁতের রেশম থেকে কারিগরদের যত্ন ও দক্ষতায় এগুলি গড়ে ওঠে। প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে এই দক্ষতা পরিবাহিত হয়। কারিগরদের হাতের তালের সঙ্গে সঙ্গে গুণগুণ স্বরে যখন এই শাড়ি বোনা হয়, তখন তাতে প্রাণের সঞ্চার ঘটে। এগুলি কেবল শাড়ি থাকে না, হয়ে ওঠে ভারতের বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রাণবন্ত আত্মার প্রতীক।
রেশম পোকার চাষের ক্ষেত্রে তুঁত, ওক, ক্যাস্টার ও অর্জুন পাতায় গুটি পোকা পালন করা হয়। রেশমকে নরম করার জন্য এই গুটিগুলি সংগ্রহ করে সিদ্ধ করা হয়। এগুলি থেকে সিল্কের সুতো বের হয়, তা থেকে বোনা হয় শাড়ি।
ভারতে কর্ণাটক, অন্ধ্রপ্রদেশ, তামিলনাডু, জম্মু ও কাশ্মীর এবং পশ্চিমবঙ্গে তুঁতের রেশম উৎপাদিত হয়। তুঁতবিহীন রেশম উৎপাদিত হয় ঝাড়খন্ড, ছত্তিশগড়, ওড়িশা ও উত্তর-পূর্বের রাজ্যগুলিতে। তুঁতের রেশম আসে রেশম পোকা থেকে। এরা শুধুমাত্র তুঁতের পাতা খায়। দেশের মোট কাঁচা রেশম উৎপাদনের ৯২ শতাংশ আসে তুঁত থেকে। তুঁত বিহীন রেশমের অন্য নাম বানিয়া সিল্ক। এর পোকাগুলি ওক, ক্যাস্টার এবং অর্জুন গাছের পাতা খায়। এই সিল্কের উজ্জ্বলতা অপেক্ষাকৃত কম। তবে, এটি টেকসই ও পরিবেশ-বান্ধব।
সিল্কের দাম বেশি, এর বাণিজ্যের পরিমাণ কম। বিশ্বের মোট বস্ত্র উৎপাদনের মাত্র ০.২ শতাংশ অধিকার করে সিল্ক। সিল্ক উৎপাদনকে অর্থনৈতিক উন্নয়নের এক গুরুত্বপূর্ণ হাতিয়ার হিসেবে ধরা হয়। উন্নয়নশীল দেশগুলিতে এটি কর্মসংস্থান সৃষ্টির উপলক্ষ্য হিসেবে পরিগণিত হয়।
ভারতে কাঁচা রেশমের উৎপাদন ধারাবাহিকভাবে বাড়ছে। ২০১৭-১৮ সালে উৎপাদন ছিল ৩১ হাজার ৯০৬ টন, ২০২৩-২৪ সালে তা বেড়ে হয়েছে ৩৮ হাজার ৯১৩ টন।
সিল্কের উৎপাদন প্রক্রিয়ার বর্জ্য কম গুণমানের সিল্কের সুতো বা বস্ত্র তৈরিতে ব্যবহার করা যেতে পারে, নতুন রেশম বস্ত্রেও এটি পুনর্ব্যবহার করা হয়।
রেশম উন্নয়নে সরকারি প্রকল্প – ভারতে রেশম শিল্পের উন্নয়নে সরকারি প্রকল্পগুলি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। দেশ জুড়ে রেশম শিল্পের উন্নয়নে সরকার ‘সিল্ক সমগ্র প্রকল্প’ হাতে নিয়েছে। এর লক্ষ্য হ’ল – রেশমের উৎপাদন ও উৎপাদনশীলতা বাড়ানো এবং এর গুণমানে উন্নতিসাধন। এই প্রকল্পের ৪টি প্রধান উপাদান রয়েছে। এগুলি হ’ল – ১) গবেষণা ও উন্নয়ন, প্রশিক্ষণ, প্রযুক্তি হস্তান্তর এবং তথ্য প্রযুক্তি সংক্রান্ত প্রয়োগ; ২) বীজ সংক্রান্ত সংগঠন; ৩) সমন্বয় ও বাজার উন্নয়ন এবং ৪) মানের শংসাপত্র প্রদান পদ্ধতি/রপ্তানি ব্র্যান্ডের প্রসার এবং প্রযুক্তির উন্নয়ন।
২০২১-২২ থেকে ২০২৫-২৬ সময়কালের জন্য সিল্ক সমগ্র-২ প্রকল্প হাতে নেওয়া হয়েছে। এর জন্য মোট বাজেট বরাদ্দ ৪৬৭৯.৮৫ কোটি টাকা। এ পর্যন্ত কেন্দ্রীয় সাহায্য হিসেবে ১০৭৫.৫৮ কোটি টাকা দেওয়া হয়েছে। এর সুফল পেয়েছেন ৭৮ হাজারেরও বেশি মানুষ।
এছাড়া, সরকারের অন্য প্রকল্পগুলি হ’ল –
কাঁচামাল সরবরাহ প্রকল্প, জাতীয় হস্তচালিত তাঁত উন্নয়ন কর্মসূচি এবং বস্ত্র শিল্পে সক্ষমতা বৃদ্ধি প্রকল্প (সমর্থ)। এই প্রকল্পগুলি কাঁচা রেশম উৎপাদনের পরিমাণ ও গুণমান বৃদ্ধিতে সাহায্য করেছে। দেশের রেশম শিল্পের বিকাশে সহায়ক হয়েছে। সরকারি প্রকল্পগুলি কৃষক, তাঁতী ও গ্রামীণ পরিবারগুলির পাশে দাঁড়িয়েছে। প্রশিক্ষণ, নতুন ভাবনাচিন্তা ও আরও ভালো বাজার অন্বেষনের উপর বিশেষ জোর দেওয়া হয়েছে। সিল্কের ক্ষেত্রে বিশ্বনেতায় পরিণত হওয়ার সম্ভাবনা ভারতের রয়েছে। এর মাধ্যমে আমাদের সিল্কের ঐতিহ্যও বেঁচে থাকবে।