ওয়েব ডেস্ক; ১০ এপ্রিল : মহিলাদের শিক্ষা, দক্ষ করে তোলা এবং কর্মসংস্থানের লক্ষ্যে সরকারের অবিরত উদ্যোগের ফলে মহিলাদের সামনে কর্মসংস্থানের সুযোগ বৃদ্ধি পেয়েছে। আরও বেশি সংখ্যায় এখন ঘরে-বাইরে লাভজনক কাজে তাঁরা যুক্ত হতে পারছেন। গত কয়েক দশকে নিউক্লিয়ার ফ্যামিলির দ্রুত বৃদ্ধি ঘটেছে। ফলে কর্মরতা মহিলারা যাঁরা আগে যৌথ পরিবারের সাহায্য পেতেন, সন্তানদের ভালো যত্ন এবং সুরক্ষার জন্য তাঁদের এখন ডে-কেয়ার সার্ভিসের প্রয়োজন হয়ে পড়েছে। পালনা কর্মসূচির মাধ্যমে ডে-কেয়ার ক্রেশের সুযোগ দেওয়া হচ্ছে।
২০২২-এ তদানীন্তন ন্যাশনাল ক্রেশ স্কিম পুনর্গঠিত হয় এবং তার নাম দেওয়া হয় পালনা কর্মসূচি, মিশন শক্তির সামর্থ্য উপকর্মসূচির অধীনে। কেন্দ্রীয় সরকারি পালনা কর্মসূচি ঠিক মতো রূপায়িত হচ্ছে কি না, তার দেখভাল করার দায়িত্ব থাকে রাজ্য এবং কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির ওপর। ৬০ শতাংশ অর্থ দেয় কেন্দ্র এবং ৪০ শতাংশ অর্থ দেয় কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলি। উত্তরপূর্ব এবং বিশেষ শ্রেণীর রাজ্যগুলির ক্ষেত্রে এই অনুপাত ৯০:১০। বিধানসভা নেই এমন কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলগুলির ক্ষেত্রে কেন্দ্র পুরোপুরি ১০০ শতাংশ আর্থিক সাহায্য দিয়ে থাকে।
পালনা কর্মসূচির লক্ষ্য, ৬ মাস থেকে ৬ বছর বয়সী শিশুদের জন্য সুরক্ষিত নিরাপদ পরিবেশ দেওয়া, পুষ্টির ব্যবস্থা করা, স্বাস্থ্য এবং সার্বিক বিকাশে সাহায্য করা এবং বৃদ্ধির প্রতি নজর রাখা ও টিকাকরণের ব্যবস্থা করা। মা যে কোনো কাজেই যুক্ত হন না কেন, পালনায় ক্রেশের সুবিধা তিনি পাবেন।
যে প্রধান পরিষেবাগুলি দেওয়া হয়ে থাকে, সেগুলি হল-
ডে-কেয়ারের সুবিধা, যার মধ্যে থাকবে শয়নের ব্যবস্থা
৩ বছরের কম বয়সী শিশুদের জন্য আগাম উদ্দীপনা কার্যাবলী
৩-৬ বছর বয়সী শিশুদের জন্য বিদ্যালয়-পূর্ব শিক্ষাদান
স্থানীয় স্তরে অতিরিক্ত পুষ্টির ব্যবস্থা
বৃদ্ধির প্রতি নজর রাখা, স্বাস্থ্য পরীক্ষা এবং টিকাকরণ
চাইল্ড কেয়ার সুবিধার সুযোগ বৃদ্ধি করার অঙ্গ হিসেবে শ্রম ও কর্মসংস্থান মন্ত্রক মাতৃত্বকালীন সুবিধা আইন সংশোধন করে ৫০ অথবা অধিক কর্মচারী আছে এমন সকল প্রতিষ্ঠানের জন্য ক্রেশের সুবিধা রাখা বাধ্যতামূলক করেছে।
দু-ধরনের ক্রেশ আছে। শুধুমাত্র ক্রেশ অর্থাৎ যেগুলি স্ট্যান্ড অ্যালোন ক্রেশ এবং অঙ্গনওয়াড়ী-কাম-ক্রেশ(এডাব্লুসিসি)। মিশন শক্তির নীতি-নির্দেশিকা অনুযায়ী স্ট্যান্ড অ্যালোন ক্রেশের জন্য একজন কর্মী এবং একজন সহায়ক রাখার সংস্থান আছে। তেমনই এডাব্লুসিসি-র জন্য ইতিমধ্যে কর্মরত অঙ্গনওয়াড়ী কর্মী এবং সহায়কদের পাশাপাশি একজন ক্রেশ সহায়ক এবং একজন ক্রেশ কর্মী রাখার সংস্থান করা হয়েছে। নারী ও শিশু কল্যাণ মন্ত্রক পালনা কর্মসূচিতে ২০২৪-২৫-এ ১৭০০০টি নতুন অঙ্গনওয়াড়ী কাম ক্রেশ স্থাপনের লক্ষ্য নিয়েছে। ২০২৫-এর মার্চ পর্যন্ত ৩৪টি রাজ্য ও কেন্দ্রশাসিত অঞ্চলে ১১৩৯৫টি এডাব্লুসিসি-র অনুমোদন দেওয়া হয়েছে।
অঙ্গনওয়াড়ী কর্মীদের তত্ত্বাবধানে ক্রেশ কর্মীরা নজর রাখবেন শিশুদের ঘুম ও বিশ্রামের ওপর। ব্যক্তিগত পরিচ্ছন্নতা নিশ্চিত করবেন। শিশুদের পরিচ্ছন্নতার অভ্যাস তৈরি করতে প্রশিক্ষণ দেবেন, নিয়মিত স্বাস্থ্য পরীক্ষার ব্যবস্থা করবেন এবং আশা, এডাব্লুডাব্লু, প্রাথমিক স্বাস্থ্যকেন্দ্র, এডাব্লুসি-র সঙ্গে যোগাযোগ রাখবেন। খাবার স্বাস্থ্যকরভাবে ও বয়স অনুযায়ী রান্না হয়েছে কি না তা নিশ্চিত করবেন। শিশুদের খেলনা দেওয়ার আগে তার গুণমান পরীক্ষা করবেন বিধি অনুযায়ী।
২০২৫-এর ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত ১,৭৬৭টি এডাব্লুসিসি কাজ করছে। বর্তমান সুবিধাপ্রাপকদের সংখ্যা ২৮,৭৮৩। এর পাশাপাশি ১,২৮৪টি স্ট্যান্ড অ্যালোন ক্রেশ আছে দেশজুড়ে যার বর্তমান সুবিধাপ্রাপকের সংখ্যা ২৩,৩৬৮।
মিশন শক্তির নীতি নির্দেশিকা অনুযায়ী স্থানীয় প্রয়োজন অনুসারে ক্রেশের সময় নির্ধারণ করতে হবে। মাসের মধ্যে ২৬ দিন খুলে রাখতে হবে। এলাকার বেশিরভাগ মায়ের কাজের নির্ঘণ্ট অনুযায়ী দৈনিক সাড়ে ৭ ঘণ্টা খোলা রাখতে হবে।
ক্রেশ কর্মী এবং ক্রেশ সহায়িকাদের সাম্মানিক দেওয়া হয়ে থাকে। স্ট্যান্ড অ্যালোন ক্রেশের ক্ষেত্রে ক্রেশ কর্মীদের ৬৫০০ টাকা, সহায়কদের ৩২৫০ টাকা এবং এডাব্লুসিসি-র ক্ষেত্রে ক্রেশ কর্মীদের ৫,৫০০ টাকা এবং ক্রেশ সহায়কদের ৩০০০ টাকা সাম্মানিক দেওয়া হয়ে থাকে। এক একটি ক্রেশে অন্যূন ২৫ জন শিশু রাখা যেতে পারে। শিশুদের বাড়ির কাছে অথবা মায়েদের কর্মস্থলের কাছাকাছি ক্রেশের অবস্থান হওয়া বাঞ্ছনীয়।
৬ মাস থেকে ৬ বছর পর্যন্ত শিশুদের উপযুক্ত পরিবেশ দিতে পালনা কর্মসূচি শিশুদের সার্বিক যত্ন, পুষ্টি, শিক্ষা এবং স্বাস্থ্য পরিষেবা নিশ্চিত করে। একাধিক মন্ত্রকের সহযোগিতা এবং স্থানীয় প্রয়োজনের সঙ্গে মানিয়ে নেওয়ার বিষয়টি থাকায় পালনা স্বাস্থ্যকর, আরও অন্তর্ভুক্তিমূলক এবং লিঙ্গ সংবেদনশীল কর্মসূচি।