চন্দন চক্রবর্তী

সব কিছুর একটা উৎস স্থল থাকে। কোথা থেকে এল? সেই ‘গঙ্গা তুমি কোথা হইতে আসিয়াছো?” অনেকটা সেইরকম এই রঙ খেলা তো হঠাৎ হয় না। উৎস সন্ধানে নেমে পড়ে যা জানলাম বা বুঝলাম তা হল

দেল (দেউল), দোল, দুর্গোৎসব এই তিন নিয়েই পুরানো কলকাতায় আনন্দ-উৎসব। ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানির সঙ্গে যুদ্ধে নবাব সিরাউজদ্দৌলার পরাজয় (১৭৫৭ খৃস্টাব্দে)। অর্থনৈতিক, রাজনৈতিক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। তখন অভিজাত বা সাধারণ মানুষ কৃষ্ণের বাঁশি ছাড়াও শক্তিদেবীর অসিকেও প্রাধান্য দেয়। কৃষ্ণের বাঁশি ধ্বনির সঙ্গে সঙ্গে শুরু হল দুর্গা, কালী পুজো। জব চার্ণকের উদ্যোগে নগর কলকাতা গড়ে ওঠার পর দেখা গেল অভিজাত ধনবান মানুষদের বাড়িতে প্রতিষ্ঠিত দেউল বা মন্দিরে সাড়ম্বরে রাধাকৃষ্ণের আরাধনা চলছে।

পুরানো কলকাতার সুতানুটি অর্থাৎ উত্তর কলকাতার যেখানে সুতো তথ্য বস্তু নিয়ে কাজ কারবার নিয়ে ব্যবসা ছিল প্রধান। গোবিন্দপুর অর্থাৎ ফোর্ট উইলিয়াম এবং বর্তমান গড়ের মাঠ অঞ্চলটি। এবং মধ্যবর্তী বড়বাজার সন্নিহিত অঞ্চলের বিভিন্ন মন্দিরে রাধাকৃষ্ণের বিগ্রহ থাকত, পুজো হতো। শুরু হল হোলি, রঙখেলা, ন্যাড়া পোড়ানা। জমিদার বাড়িতে পুরানো চাঁচর অর্থাৎ শুকনো ডালপালা জড়ো করে আগুন জ্বালানো হত। এটাই চাঁচর উৎসব। এর আবার পৌরাণিক ব্যাখ্যাও আছে। বলা হয় কৃষ্ণগত প্রাণ প্রহ্লাদকে পুড়িয়ে মারার জন্য দৈত্যরাজ হিরণ্যকশিপু নিজের সহোদরা ‘হোলিকা’কে নিযুক্ত করে। কৃষ্ণের সহায় প্রহ্লাদ রক্ষা পায়। বেচারা হোলিকার মৃত্যু ঘটে ষড়যন্ত্রের আগুনে। তাই পরের দিন আনন্দ উৎসব ‘হোলি’ রঙের খেলা শুরু হয়।

দ্বিতীয় মত হল-টুণ্ডা নামে এক রাক্ষসী শিবের বরে বলশালী হয়ে ছোট ছোট ছেলে-মেয়েদের মেরে ফেলতে শুরু করে। তখনই তাকে চাচরের মধ্যে আগুন জ্বালিয়ে পুড়িয়ে মারা হয়।

তৃতীয়টি হল-মেড়াসুরের হত্যা। এক অত্যাচারী অসুর মেড়া ভেড়ার রূপ ধারণ করে অত্যাচার করত। তাকে

দোলের আগের দিন ‘মেড়াপোড়া করা হয়েছিল। এভাবে হত্যা করা হয়। সেই থেকে সম্ভবত ‘ন্যাড়াপোড়া’।

যাইহোক, দোল এবং ন্যাড়াপোড়ার উৎস বোঝা গেল… ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি এই সময় রঙ-উৎসবের জন্য পাঁচ দিন ছুটি হত। চলত পাঁচদিন ধরে উৎসব। জার্মান থেকে রঙ আসত। অভিজাতরা পিতলের পিচকারি আর পিতলের বালতিতে সুগন্ধী মেশানো জলে রঙ গোলা হত। এবং খেলা চলত।

টিনের বা বাঁশের পিচকারি দু-পয়সা দাম ছিল। অন্যদিকে পিতলের পিচকারির দাম ছ’আনা থেকে দুশ আনা।