কলকাতা, ২২ ডিসেম্বর, ২০২১: পূর্ব ভারতে প্রথমবার অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতালের অধ্যাপক মহেশ কুমার গোয়েঙ্কার নেতৃত্বাধীন গ্যাস্ট্রো টিম গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট রোগ নির্ণয় ও চিকিত্সার জন্য আধুনিক এবং নিরাপদ প্রক্রিয়া পাওয়ার স্পাইরাল এন্টারোস্কোপি শুরু করেছে। এই মোটরচালিত এন্ডোস্কোপ প্রক্রিয়ায় এন্ডোস্কোপি এবং কোলনোস্কোপি এবার থেকে সহজে হবে। কারণ এটি মুখ ও মলদ্বারের মাধ্যমে প্রবেশ করানো যেতে পারে। সবচেয়ে নিরাপদ হওয়ার পাশাপাশি এই প্রক্রিয়া অন্ত্রের প্যাথলজি পরিচালনা এবং রোগ সনাক্তকরণের জন্য সবচেয়ে কার্যকর। আজ এক সাংবাদিক সম্মেলনে হাসপাতালে পক্ষ থেকে এ কথা জানানো হয়।
অ্যাপোলো হসপিটালস গ্রুপ-এর ইস্টার্ন রিজিয়ন-এর ডিএমএস ডাঃ সুরিন্দর সিং ভাটিয়া এই উপলক্ষে বলেছেন, “অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটাল কলকাতায় নতুন প্রযুক্তি আনার ক্ষেত্রে বরাবর পথপ্রদর্শক হিসেবেই থেকেছে। অত্যাধুনিক পদ্ধতিতে চিকিত্সা করানোর ব্যাপারে আমরা সব সময় অগ্রণী ভূমিকা নিয়েছি৷ আমাদের চিকিত্সকরাপ্রতিশ্রুতিবদ্ধ। এই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি গ্যাস্ট্রো সংক্রান্ত সমস্যায় অনেককে সাহায্য করবে।”
ক্ষুদ্রান্ত্র হল গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্ট-এর একটি ২০ ফিট লম্বা অংশ। এটি যক্ষ্মা, ক্রোহনস ডিজিজ, ওষুধজনিত আলসার, ভাস্কুলার ম্যালফরমেশন ইত্যাদির মতো সাধারণ রোগের জায়গা। ২০ বছর আগে পর্যন্ত এই অংশ এন্ডোস্কোপ-এর মাধ্যমে পরীক্ষা করা যেত না। ক্যাপসুল এন্ডোস্কোপি এবং বেলুন এন্টারোস্কোপি তৈরি করা হয়েছে আগেই। কিন্তু এই পদ্ধতি তুলামূলক কঠিন এবং ক্লান্তিকর। ফলে এর অনেক অসুবিধা রয়েছে।
রোগীদের জন্য সম্পূর্ণ প্রক্রিয়াটি সহজ করতে এবং ডাক্তারদের সাহায্য করার জন্য, অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হাসপাতাল, কলকাতা সম্প্রতি চালু করেছে পাওয়ার স্পাইরাল এন্টারোস্কোপি। একটি বিশেষ মোটর দিয়ে সজ্জিত এক ধরণের এন্ডোস্কোপ। এই বিষয়ে অ্যাপোলো মাল্টিস্পেশালিটি হসপিটালস-এর ইনস্টিটিউট অফ গ্যাস্ট্রোসায়েন্সেস, ডিরেক্টর অধ্যাপক মহেশ কুমার গোয়েঙ্কা বলেছেন, “ছোট এই যন্ত্র এন্ডোস্কোপিক মূল্যায়ণের কাজে লাগবে। ২০ ফিট লম্বা ক্ষুদ্রান্ত্রটির পরীক্ষার জন্য একটি প্যাডেলের মতো অংশ টিপে রাখতে হবে। স্টিয়ারিং, এক্সিলারেটর এবং ব্রেক থাকবে। একেবারে গাড়ি চালানোর মতো পদ্ধতি। এটি শুধুমাত্র ক্ষুদ্রান্ত্রের জটিল অবস্থার চিকিৎসায় সাহায্য করে না, বরং দীর্ঘস্থায়ী এবং জটিল অবস্থার জন্য দায়ি রোগের নির্ণয় এবং রোগীর চিকিত্সা পদ্ধতিকেও উন্নত করবে।”
পাওয়ারস্পাইরাল একটি সর্পিল অংশ। যা ব্যবহার করে ক্ষুদ্রান্ত্রের গ্যাস্ট্রোইনটেস্টাইনাল ট্র্যাক্টের গভীরে পৌঁছানো যাবে দ্রুত। এটি একটি সমন্বিত মোটরের মাধ্যমে চালানো হবে। এটি সিঙ্গল ইউজ পাওয়ারস্পাইরাল কভার টিউবটিকে ঘোরাবে। এর সঙ্গে জুড়ে থাকবে একটি নরম, সর্পিল আকৃতির পাখনা দিয়ে সজ্জিত অংশ। যা আলতোভাবে মিউকোসাকে অনুসরণ করবে। নিয়ন্ত্রিত গতি, নিয়ন্ত্রিত পরিচালা এবং উন্নত পর্যালোচনা সামগ্রিক পদ্ধতির সময় উল্লেখযোগ্যভাবে কমিয়ে আনতে পারবে। ফলে কার্যকরী চিকিত্সার জন্য সময় বাড়তে পারে। মোটর চালিত সর্পিল অংশে নরম পাখনার মতো কভার থাকায় মসৃণ, নিরাপদ এবং গভীরে গিয়ে পরীক্ষা চালাতে পারবে। ফলে সমগ্র অন্ত্রের লুমেন দেখা সম্ভব হযবে। এই সমস্ত মিলিত বৈশিষ্ট্যগুলি ক্ষুদ্রান্ত্রের গভীরে প্রবেশ করে পরীক্ষা সহজ করে তুলবে।
সর্পিল অংশের নরম পাখনার মতো অংশ মিউকোসাকে উপর থেকে মৃদু আঁকড়ে ধরবে। ফলে এন্ডোস্কোপ-এর সুনির্দিষ্ট অবস্থান থাকবে। ইন্টিগ্রেটেড ওয়াটার জেট পুরো প্রক্রিয়ায় সব দৃশ্য পরিষ্কার রাখবে। প্রচলিত এন্ডোস্কোপ সময়সাপেক্ষ। তবে পাওয়ারস্পাইরাল এন্ডোথেরাপিউটিক ডিভাইস বিস্তৃত পরিসরের পরীক্ষার সুযোগ করে দেবে। উন্নত প্রক্রিয়ার সহায়তায় ক্ষত স্থানে আরও দ্রুত পৌঁছানো যেতে পারে। প্রথমবার গবেষণার ফলাফল দেখিয়েছে, পাওয়ারস্পাইরাল এন্ডোস্কোপের মাধ্যমে পুরো পদ্ধতি শেষ করতে উল্লেখযোগ্যভাবে কম সময় লেগেছে। যা কি না চিকিত্সা পদ্ধতিতে খুবই গুরুত্বপূর্ণ ব্যাপার।
এছাড়া ক্ষুদ্রান্ত্রের সম্পূর্ণ পরিদর্শন, দ্রুত, নিরাপদ, যন্ত্রণাহীন, বায়োপসি করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে, ক্ষুদ্রান্ত্রের রোগের চিকিৎসায় সহায়ক হতে পারে বলে দাবি ডাক্তার বাবুদের। অন্যান্যদের মধ্যে উপস্থিত ছিলেন ডাক্তার তিওয়ারি ।
পাওয়ার স্পাইরাল বায়োপসির জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। এছাড়া ছোট টিউমার অপসারণ, শরীরের কোনও অংশে অযাচিত কিছুর অপসারণ এবং রক্তপাত বন্ধ করার জন্য ব্যবহার করা যেতে পারে। পুরো প্রক্রিয়াটি শুধুমাত্র সম্পূর্ণই নয়, আগের প্রক্রিয়াগুলির তুলনায় খুব দ্রুত কাজ করবে বলেও দাবি করা হয়েছে। এছাড়া সুরক্ষার দিক থেকেও এটি আগের প্রক্রিয়ার থেকে এগিয়ে। উন্নত যন্ত্রের জন্য এই প্রক্রিয়া সম্পূর্ণ নিরাপদ। পদ্ধতিটি রোগীর নির্ধারিত স্থান অবশ করে করা হবে। তাই এটি একেবারে ব্যথামুক্ত।