ওয়েব ডেস্ক; ২৯ নভেম্বর : ফুসফুস ক্যানসার সচেতনতা মাস উপলক্ষে স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা ফুসফুস ক্যানসারের ক্রমবর্ধমান সমস্যার মোকাবিলায় সচেতনতা বৃদ্ধি, প্রাথমিক শনাক্তকরণ, এবং প্রতিরোধমূলক পদক্ষেপ গ্রহণের প্রয়োজনীয়তার ওপর বিশেষ জোর দিচ্ছেন। এই বৈশ্বিক উদ্যোগটি ফুসফুসের সুস্বাস্থ্য রক্ষায় ব্যক্তিগত পদক্ষেপ গ্রহণের গুরুত্ব স্মরণ করিয়ে দেয়।
ফুসফুস ক্যানসার বিশ্বের অন্যতম সাধারণ ক্যানসার, যা প্রায়শই নীরব প্রক্রিয়ায় অগ্রসর হওয়ায় দেরিতে ধরা পড়ে। বিশেষজ্ঞরা জনগণকে ধূমপানমুক্ত জীবনধারা অনুসরণ করতে, নিয়মিত স্বাস্থ্যপরীক্ষা করাতে এবং দীর্ঘস্থায়ী কাশি, অজানা ওজন হ্রাস বা শ্বাসকষ্টের মতো লক্ষণ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিতে উৎসাহিত করছেন।
নারায়ণা হাসপাতাল, হাওড়ার থোরাসিক ও ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের পরামর্শদাতা ডাঃ মনুজেশ বন্দ্যোপাধ্যায় জানান, ফুসফুস ক্যানসারের প্রধান কারণ ধূমপান এবং বায়ুদূষণ। প্রাথমিক লক্ষণগুলো সিওপিডি বা হাঁপানির মতো হলেও, দীর্ঘস্থায়ী কাশি, কফে রক্ত দেখা যাওয়া, ওজন হ্রাস এবং দীর্ঘমেয়াদী শ্বাসকষ্ট ক্যানসারের ইঙ্গিত হতে পারে। ভারতে ফুসফুস ক্যানসারের স্ক্রিনিং সাধারণভাবে প্রচলিত নয়, তবে ৫০-৮০ বছরের মধ্যে বয়স এবং ২০ প্যাক-ইয়ার ধূমপানের ইতিহাস থাকলে স্ক্রিনিং সহায়ক হতে পারে। সার্জারি ফুসফুস ক্যানসারের সবচেয়ে কার্যকরী চিকিৎসা, তবে সার্জারি সম্ভব না হলে কেমোথেরাপি, রেডিওথেরাপি এবং ইমিউনোথেরাপি বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উপসর্গ দেখা দিলে তৎক্ষণাৎ চিকিৎসকের পরামর্শ নিন এবং মাল্টিডিসিপ্লিনারি পদ্ধতির মাধ্যমে চিকিৎসা গ্রহণ করুন।
নারায়ণা হাসপাতাল, আরএন টেগোর হাসপাতালের কার্ডিও থোরাসিক এবং ভাসকুলার সার্জারি বিভাগের সিনিয়র পরামর্শদাতা প্রফেসর (ডাঃ) অমিতাভ চক্রবর্তী বলেন, “ফুসফুস ক্যানসার, একটি প্রধান বৈশ্বিক স্বাস্থ্য সমস্যা, ধূমপান এবং পরিবেশ দূষণের সঙ্গে নিবিড়ভাবে যুক্ত। বায়ুদূষণ, বিশেষত সূক্ষ্ম বস্তুকণা (PM2.5) এবং শিল্প নিঃসরণ, ধূমপান না করা ব্যক্তিদের মধ্যেও ফুসফুস ক্যানসারের ঝুঁকি উল্লেখযোগ্যভাবে বৃদ্ধি করে। পারিবারিক ইতিহাসসহ অন্যান্য ঝুঁকির কারণগুলোর সঙ্গে এই পরিবেশগত বিপদগুলো নিয়মিত স্ক্রিনিং এবং প্রাথমিক শনাক্তকরণকে অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ করে তোলে। পরিচ্ছন্ন প্রযুক্তি ব্যবহার করে দূষণ কমিয়ে আনা এবং এর ফুসফুসের ওপর প্রভাব সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি করে আমরা রোগীদের লড়াইয়ে সহায়তা করতে এবং দূষণমুক্ত পরিবেশের জন্য প্রচার চালাতে প্রতিজ্ঞাবদ্ধ।”
হাসপাতাল ও স্বাস্থ্য সংস্থাগুলি ফুসফুসের সুস্বাস্থ্য সম্পর্কে সচেতনতা বৃদ্ধি, বিনামূল্যে স্বাস্থ্যপরীক্ষা এবং শিক্ষামূলক প্রচারণা আয়োজন করছে। এই উদ্যোগের লক্ষ্য প্রাথমিকভাবে রোগ নির্ণয়ের মাধ্যমে আক্রান্ত ব্যক্তিদের সহায়তা করা এবং সুস্থ, ফুসফুস ক্যানসার মুক্ত ভবিষ্যতের পথ প্রশস্ত করা।