জাতীয় শিক্ষানীতি, ২০২০-র আওতায় সংস্কারের এক বছর পূর্তি উপলক্ষে প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী আজ ভিডিও কনফারেন্সের মাধ্যমে শিক্ষা ও দক্ষতা বিকাশ ক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত নীতিপ্রণেতা সহ ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকাদের উদ্দেশে ভাষণ দিয়েছেন। জাতীয় শিক্ষানীতির প্রথম বর্ষপূর্তি উপলক্ষে তিনি শিক্ষাক্ষেত্রের সঙ্গে যুক্ত একাধিক উদ্যোগের সূচনা করেছেন।
জাতীয় শিক্ষানীতির প্রথম বর্ষপূর্তিতে দেশবাসী ও ছাত্রছাত্রীদের অভিনন্দন জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী কোভিড-১৯-এর মতো জটিল সময়েও জাতীয় শিক্ষানীতির উদ্দেশ্যগুলি বাস্তবায়িত করতে শিক্ষক-শিক্ষিকা, অধ্যাপক-অধ্যাপিকা ও নীতিপ্রণেতাদের নিরলস প্রচেষ্টার ভূয়সী প্রশংসা করেন। ‘আজাদি কা অমৃত মহোৎসব’ বর্ষের তাৎপর্য উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেছেন, গুরুত্বপূর্ণ এই সময়ে নতুন শিক্ষানীতি বড় ভূমিকা পালন করবে। মোদী বলেন, আমাদের যুবকদের শিক্ষা ও দিশা-নির্দেশের ওপর দেশের ভবিষ্যৎ অগ্রগতি ও প্রগতি নির্ভরশীল। “আমি মনে করি, জাতীয় উন্নয়নের মহাযজ্ঞে এটি একটি বড় ও তাৎপর্যপূর্ণ বিষয়”, বলে প্রধানমন্ত্রী অভিমত প্রকাশ করেন।
প্রধানমন্ত্রী মহামারীর ফলে যে পরিবর্তন এসেছে সে কথা উল্লেখ করে বলেন, একইভাবে ছাত্রছাত্রীদের কাছেও অনলাইন পঠনপাঠন ‘নর্মাল’ বা স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। ছাত্রছাত্রী ও শিক্ষক-শিক্ষিকারা ছাড়াও ২,৩০০ কোটি মানুষ ‘দীক্ষা’ পোর্টাল দেখেছেন বা তার পরিষেবা নিয়েছেন। প্রকৃতপক্ষে ‘দীক্ষা’ ও ‘স্বয়ম’-এর মতো পোর্টালের কার্যকরিতা এ থেকে প্রমাণিত হয়।
ছোট শহর থেকে উঠে আসা যুবাদের প্রচেষ্টার কথা প্রধানমন্ত্রী বিশেষভাবে উল্লেখ করেন। এ ধরনের শহর থেকে উঠে আসা যুবাদের টোকিও অলিম্পিকে ভালো ক্রীড়া নৈপুণ্য প্রদর্শনের কথা উল্লেখ করেন প্রধানমন্ত্রী। একইসঙ্গে তিনি রোবোটিক্স, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা, স্টার্ট-আপ, চতুর্থ শিল্প বিপ্লবে তাঁদের অগ্রণী ভূমিকা পালনের প্রশংসাও করেন। তিনি বলেন, নবীন প্রজন্ম যদি তাঁদের স্বপ্ন ও প্রত্যাশা পূরণের অনুকূল পরিবেশ পায় তাহলে তাঁদের অগ্রগতির কোনও সীমা থাকে না। তিনি জোর দিয়ে বলেন, আজকের যুবারা নিজেদের ব্যবস্থা নিজেদের পদ্ধতি অনুযায়ী স্থির করতে চায় এবং নিজেদের মতো করেই বিশ্ব ব্যবস্থা গড়ে তুলতে আগ্রহী। অবশ্য এজন্য তাঁদের যাবতীয় শেকল ও বিধি-নিষেধ থেকে মুক্ত করা প্রয়োজন। এই লক্ষ্যে যুবারা যাতে তাঁদের প্রত্যাশা পূরণ করতে পারেন তার জন্য সমগ্র দেশ পাশে রয়েছে বলে জাতীয় শিক্ষানীতি অঙ্গীকার প্রকাশ করছে। আজ যে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত কর্মসূচির সূচনা হয়েছে তা ছাত্রছাত্রীদেরকে ভবিষ্যতমুখী করে তুলবে এবং কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা পরিচালিত অর্থনীতির পথ আরও প্রশস্ত করবে। তিনি বলেন, একইভাবে ন্যাশনাল ডিজিটাল এডুকেশন আর্কিটেকচার (এনডিইআরএ) এবং ন্যাশনাল এডুকেশন টেকনলজি ফোরাম (এনইটিএফ) সারা দেশে ডিজিটাল ও প্রযুক্তিগত কাঠামো গড়ে তুলতে সুদূরপ্রসারী ভূমিকা নেবে।
নতুন জাতীয় শিক্ষানীতিতে ছাত্রছাত্রীদের জন্য সরলতা ও চাপমুক্ত পরিবেশের কথাও প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন। তিনি বলেন শিক্ষানীতিতে যেমন সরলতা রয়েছে, তেমনই ছাত্রছাত্রীদের স্বার্থে নতুন শিক্ষানীতিতে একাধিক বিকল্প পন্থা গ্রহণের সরলতাও যুক্ত হয়েছে। এর ফলে, ছাত্রছাত্রীরা একটি কোর্সে আবদ্ধ হওয়া থেকে মুক্ত হবে। এমনকি, প্রয়োজনে তারা নিজের ইচ্ছামতো অন্য কোর্সে যুক্ত হতে এবং বেরিয়ে আসতে পারবেন। তিনি বলেন, আধুনিক প্রযুক্তি-ভিত্তিক অ্যাকাডেমিক ব্যাঙ্ক অফ ক্রেডিট ব্যবস্থা সমগ্র শিক্ষা ব্যবস্থায় আমূল পরিবর্তন নিয়ে আসবে। পক্ষান্তরে, এই ব্যবস্থা ছাত্রছাত্রীদের নিজস্ব কোর্স বা বিষয় পছন্দ করতে আস্থা যোগাবে। ‘স্ট্রাকচার্ড অ্যাসেসমেন্ট ফর অ্যানালাইজিং লার্নিং লেভেলস’ বা সফল ব্যবস্থা ছাত্রছাত্রীদের মন থেকে পরীক্ষা ভীতি দূর করবে। এই প্রসঙ্গে প্রধানমন্ত্রী পুনরায় জোর দিয়ে বলেন, নতুন শিক্ষানীতির এই উদ্যোগগুলি ভারতের নিয়তি পালটে ফেলতে সক্ষম।
মহাত্মা গান্ধীর উদ্ধৃতি দিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে স্থানীয় ভাষার গুরুত্ব অপরিসীম। এ সম্পর্কে তিনি জানান, আটটি রাজ্যের ১৪টি ইঞ্জিনিয়ারিং কলেজে ইতিমধ্যেই বাংলা সহ পাঁচটি ভারতীয় ভাষায় পঠনপাঠন শুরু হয়েছে। এমনকি, ইঞ্জিনিয়ারিং কোর্সগুলি ১১টি ভাষায় অনুবাদের জন্য একটি ‘টুল’ বা মাধ্যম উদ্ভাবন করা হয়েছে। শিক্ষার মাধ্যম হিসেবে মাতৃভাষার ওপর এই অগ্রাধিকার দরিদ্র, গ্রামাঞ্চল এবং আদিবাসী অধ্যুষিত এলাকা থেকে উঠে আসা ছাত্রছাত্রীদের মধ্যে আস্থার সঞ্চার করবে। তিনি বলেন, ‘বিদ্যা প্রবেশ’ কর্মসূচির মাধ্যমে মাতৃভাষায় মৌলিক শিক্ষাদানের বিষয়টিকে অগ্রাধিকার দেওয়া হচ্ছে। আজ ‘বিদ্যা প্রবেশ’ কর্মসূচির সূচনা হয়েছে বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, মাতৃভাষায় শিক্ষার ক্ষেত্রে এই কর্মসূচি আগামীদিনে গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবে। শ্রী মোদী আরও বলেন, এই প্রথম ভারতীয় সাংকেতিক ভাষাকে একটি বিষয় হিসেবে মর্যাদা দেওয়া হয়েছে। এর ফলে ছাত্রছাত্রীরা সাংকেতিক ভাষাকে একটি বিষয় হিসেবে ধরে পড়াশোনা করতে পারবে। দেশে ৩ লক্ষের বেশি এমন পড়ুয়া রয়েছে যাদের সাংকেতিক ভাষায় শিক্ষা গ্রহণ অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তাই, সাংকেতিক ভাষায় অগ্রগতি হলে প্রকৃতপক্ষে দিব্যাঙ্গজনরাই উপকৃত হবেন।
শিক্ষক-শিক্ষিকাদের গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী বলেন, জাতীয় শিক্ষানীতির প্রণয়ন থেকে রূপায়ণ পর্যন্ত প্রতিটি স্তরেই শিক্ষক-শিক্ষিকারা গুরুত্বপূর্ণ অংশ হয়ে উঠেছেন। আজ শুরু হওয়া ‘নিষ্ঠা ২.০’ উদ্যোগের কথা উল্লেখ করে প্রধানমন্ত্রী জানান, এই ব্যবস্থার ফলে শিক্ষক-শিক্ষিকারা তাঁদের চাহিদা অনুযায়ী প্রশিক্ষণ নিতে পারবেন। এমনকি তাঁরা তাঁদের দপ্তরকেও বিভিন্ন বিষয়ে পরামর্শ দেবেন।
প্রধানমন্ত্রী আজ যে অ্যাকাডেমিক ব্যাঙ্ক অফ ক্রেডিট ব্যবস্থার সূচনা করেছেন তার ফলে উচ্চশিক্ষা ক্ষেত্রে ছাত্রছাত্রীরা নিজের পছন্দ অনুযায়ী কোর্সে প্রবেশ এবং প্রয়োজনে সেই কোর্স ছেড়ে বেরিয়ে আসতে পারবেন। শ্রী মোদী উচ্চশিক্ষার আন্তর্জাতিকীকরণের লক্ষ্যে আঞ্চলিক ভাষায় প্রথম বর্ষের ইঞ্জিনিয়ারিং কর্মসূচি ও নীতি-নির্দেশিকার সূচনা করেন। আজ শুরু হওয়া ‘বিদ্যা প্রবেশ’ কর্মসূচির ফলে গ্রেড-১ ছাত্রছাত্রীদের প্রাথমিক শিক্ষা ব্যবস্থায় যুক্ত হওয়ার তিন মাস আগে থেকে তাদের প্রস্তুতি পর্ব শুরু হবে। শিক্ষক-শিক্ষণের জন্য এক সুসংবদ্ধ কর্মসূচি হিসেবে ‘নিষ্ঠা ২.০’ উদ্যোগের সূচনা হয়েছে। এছাড়াও, গ্রেড-৩, গ্রেড-৫ এবং গ্রেড-৮ শ্রেণীর ছাত্রছাত্রীদের জন্য পারদর্শিতা-ভিত্তিক মূল্যায়ন কাঠামো, পরিভাষায় যা ‘সফল’ – আজ এই উদ্যোগেরও সূচনা হয়েছে। এই উপলক্ষে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা সম্পর্কিত একটি স্বতন্ত্র ওয়েবসাইটের সূচনা হয়। একইসঙ্গে, ন্যাশনাল ডিজিটাল এডুকেশন আর্কিটেকচার এবং ন্যাশনাল এডুকেশন টেকনলজি ফোরামেরও সূচনা হয়েছে।