প্রবীর আচার্য

২য় পর্বের পর …….

সেই নুন বস্তাবন্দি হয়ে সরাসরি চলে আসতো বাজারে। পরিশুদ্ধ করার কোনও ব্যবস্থা ছিল না, তার প্রয়োজনও ছিল না। কারণ নুনের মধ্যে কোনও জীবানু বেঁচে থাকতে পারে না, এই সাধারণ কথাটা তখনকার মানুষ জানতো। সমুদ্রের জলে পটাশিয়াম ও সোডিয়াম আয়োডাইড এমনিতই বর্তমান। জলটা হওয়ার পর ওই সামান্য পরিমাণ আয়োডাইড লবণ নুনের সঙ্গে মিশে থাকতো। তাই মানুষের দেহে আয়োডিনের চাহিদা যেত মিটে। ফলে আয়োডিনের অভাবের কথা মানুষ জানতেই পারতো না, তা নিয়ে মাথা ঘামাতো না কেউ।

ইংরেজরা আসার পর বেনিয়া বুদ্ধিতে নুন তৈরিতে সাধারণ মানুষের উপর নানা বিধি-নিষেধ জারি করে ব্যবসাটা নিজেদের কুক্ষিগত করে নিল। তার ফলে তখনকার দিনে নুনের ব্যবসা করে অনেকে বড়োলোক হয়ে গেল। তবে নুনের দামটা তারা খুব একটা বাড়ায়নি। কিন্তু বছর ত্রিশ-চল্লিশ আগে দেশীয় বড়ো বড়ো বাণিজ্যিক সংস্থাগুলো নতুন একটা পদ্ধতিতে নুনের ব্যবসাটাকে কুক্ষিগত করে নিল। সঙ্গে সঙ্গে নুনের দামও বেড়ে গেল মাত্রাতিরিক্তভাবে।

সমুদ্রে লবণের পরিমাণ থাকে লিটার প্রতি জলে তেত্রিশ থেকে পঁয়ত্রিশ গ্রামের মধ্যে। অর্থাৎ এক হাজার মিলিলিটার জলের ওজন এক কিলোগ্রামের পরিবর্তে হয় গড়ে এক কিলো চৌত্রিশ গ্রাম। বিজ্ঞানের ভাষায় চৌত্রিশ পিপিটি (পার্টস পার থাউজেন্ড শতাংশ)। কিন্তু বছর চল্লিশ-পঞ্চাশ আগে যখন চারদিকে চাষের কাজের জন্য পাইকারি হারে নলকূপ বসাবার ধুম পড়ে গেল, তখন দেখা গেল সমুদ্রের ধারে কোনও কোনও জায়গায় ভূনিম্নস্থ জলস্তরের লবণাক্ততা সাংঘাতিক ভাবে বেশি। এই লবণাক্ততা চৌত্রিশ পিপিটির পরিবর্তে স্থানভেদে বা ভূনিম্নস্থ স্তর ভেদে যাট থেকে একশ ষাট পিপিটি পর্যন্ত হয়। অর্থাৎ এক লিটার জলকে বাষ্পীভূত করলে চৌত্রিশ গ্রামের পরিবর্তে ষাট থেকে একশ ষাট গ্রাম পর্যন্ত নুন পাওয়া যায়। হাতে-কলমে এই তথ্য জানার পর লবণ

তৈরির ক্ষেত্রে একটা অভাবনীয় বিপ্লব এসে গেল।

ক্রমশ……