ওয়েব ডেস্ক; ২৫ মে: কেন্দ্রীয় স্বরাষ্ট্র মন্ত্রকের “জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ প্রতিষ্ঠান” রাষ্ট্রীয় রক্ষা বিশ্ববিদ্যালয় (আরআরইউ) কতৃপক্ষ কলকাতা প্রেস ক্লাবে সংবাদমাধ্যমের সদস্যদের সামনে আলোচনায় বসেন। এর মূল উদ্দেশ্য অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা বিষয়ক শিক্ষাব্যবস্থার কথা জানানো এবং জাতীয় প্রতিরক্ষা সম্পর্কিত শিক্ষার প্রসারের কৌশলগত রূপরেখা তুলে ধরা, বিশেষ করে অরুণাচল প্রদেশের পাসিঘাট ক্যাম্পাসকে কেন্দ্র করে।
এই আলোচনায় বক্তব্য রাখেন পাসিঘাট ক্যাম্পাসের ডিরেক্টর ইন-চার্জ শ্রী অবিনাশ খারেল এবং পুলিশ প্রশাসন বিষয়ক পাঠক্রমের অধ্যাপিকা ও গবেষণা আধিকারিক ঋধি ব্যানার্জি। ভিডিও-কনফারেন্সিং-এর মাধ্যমে যুক্ত হন বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রো ভাইস-চ্যান্সেলর ড. কলপেশ এইচ. ওয়ান্দ্রা।
বক্তারা বিশ্ববিদ্যালয়টির একটি আদর্শ বহুবিষয়ক শিক্ষা, গবেষণা ও প্রশিক্ষণের কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করেন, যার মূল ক্ষেত্রগুলি হল পুলিশ-ব্যবস্থা, ফরেনসিক বিজ্ঞান, সাইবার ক্রাইম তদন্ত, অভ্যন্তরীণ নিরাপত্তা এবং সংযুক্ত শাখাসমূহ।
আলোচনায় জানানো হয়, ২০২৫-২০২৬ শিক্ষাবর্ষে বিশ্ববিদ্যালয়ে শুরু হতে চলেছে একাধিক জাতীয় নিরাপত্তা-কেন্দ্রিক পাঠক্রম—যার মধ্যে স্নাতক, স্নাতকোত্তর, ডিপ্লোমা, পিজি ডিপ্লোমা ও পিএইচডি অন্তর্ভুক্ত। বিষয়গুলির মধ্যে সাইবার সিকিউরিটি, ফরেনসিক সায়েন্স, পুলিশ শাসণ, কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য। এই পাঠক্রমগুলির উদ্দেশ্য দক্ষ পেশাদার গড়ে তোলা যারা বর্তমান ও ভবিষ্যতের নিরাপত্তায় বিঘ্ন মোকাবিলায় পারদর্শী।
বিশ্ববিদ্যালয়টি ইতিমধ্যেই সারা দেশে এবং আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ৪২৫টিরও বেশি প্রশিক্ষণ কর্মসূচির মাধ্যমে ২১,০০০-রও বেশি পেশাদারকে প্রশিক্ষিত করেছে। এই ক্ষেত্রগুলিতে দক্ষ ব্যক্তিরা শুধুমাত্র প্রতিরক্ষা ও আইনশৃঙ্খলা ব্যবস্থায় নয়, বেসরকারি নিরাপত্তাভিত্তিক স্টার্টআপ এবং ইনকিউবেশন কেন্দ্রগুলির জন্যও অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠবেন।
আলোচনায় ঋদ্ধি ব্যানার্জি পশ্চিমবঙ্গের অপরাধ পরিসংখ্যানের প্রেক্ষিতে ফরেনসিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত পেশাদারদের অপরাধ প্রতিরোধে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকার কথা উল্লেখ করেন। তাঁর মতে, পশ্চিমবঙ্গে অপরাধ প্রবণতার নিরিখে স্পষ্ট যে ফরেনসিক প্রশিক্ষণপ্রাপ্ত কর্মীদের উপস্থিতি একটি কার্যকর প্রতিরোধক শক্তি হিসেবে কাজ করতে পারে। পাসিঘাট ক্যাম্পাস পশ্চিমবঙ্গের কাছাকাছি হওয়ায় জাতীয় নিরাপত্তা নিয়ে পড়াশোনার জন্য আগ্রহী ছাত্রছাত্রীদের কাছে এটি শ্রেষ্ঠ বিকল্প। তিনি আরও জানান, সেখানে একটি অত্যাধুনিক ড্রাগ ল্যাবরেটরি শীঘ্রই শুরু হতে চলেছে।
ড. ওয়ান্দ্রা জানান, বর্তমানে রাষ্ট্রীয় রক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ে পশ্চিমবঙ্গের ৩৫ জন ছাত্রছাত্রী পড়ছেন, যাঁদের মধ্যে ৭ জন গান্ধীনগর ক্যাম্পাসে রয়েছেন। তিনি আরও বলেন, সম্প্রতি পশ্চিমবঙ্গ পুলিশ (কারাগার বিভাগ)-এর ডিআইজি স্তরের আধিকারিকরা বিশ্ববিদ্যালয়ের আলোচনায় অংশগ্রহণ করেছেন, যা রাজ্য আইন সংস্থার সঙ্গে বিশ্ববিদ্যালয়ের সহযোগিতার পরিচায়ক।
এই আলোচনায় রাষ্ট্রীয় রক্ষা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা প্রচার এবং আধুনিক নিরাপত্তা ব্যবস্থার সামনে প্রতিবন্ধকতা ও বৈজ্ঞানিক প্রতিরোধমূলক ব্যবস্থা সম্পর্কে আঞ্চলিক সচেতনতা বৃদ্ধির প্রতিশ্রুতি পুনরায় তুলে ধরা হয়।
খারেল জানান, জাতীয় নিরাপত্তা ও সুরক্ষার লক্ষ্যে তরুণ প্রজন্মকে দক্ষতার সাথে গড়ে তোলা বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রধান উদ্দেশ্য।
আলোচনাটি সংবাদমাধ্যমকে দেশের নিরাপত্তা শিক্ষাব্যবস্থার আধুনিক ও নীতিনির্ধারক স্তরের সঙ্গে শিক্ষায়তনের সংযোগ বৃদ্ধির গুরুত্ব তুলে ধরার আবেদন জানিয়ে শেষ হয়।