প্রশান্ত ডোম
হিংলাজ কা ঠুমরা এবং আশাপুরি মালা পর্ব ১
হিংলাজ তীর্থযাত্রীরা মরুতীর্থ হিংলাজ এর কাছে নাগরঠাটা থেকে মালা কিনে নিয়ে দেবীর চরণে উৎসর্গ করে এবং পরে সেই মালা নিজেদের গলায় ধারণ করার রীতি রয়েছে। ফেরার পথে আশাপুরী দেবীকে দর্শন করাও দর্শনার্থীদের অবশ্য কর্তব্য। এখানে তারা উৎসর্গ করেন ৫০০ বা ১০০০ দানার একটি মালা, যেটি বড় দানার চুনাপাথরের তৈরি। পরবর্তী সময়ে এই মালা ভক্তরা নিজেদের গলায় পরম শ্রদ্ধায় জড়িয়ে রাখেন। এই দুই মালার পৌরাণিক ব্যাখ্যায় মহাযোগী গোরক্ষনাথের গুরুজি।
মৎস্যেন্দ্রনাথ বলেছিলেন— একদিন আশাপুরী অরণ্যের ভেতর দিয়ে ভগবান শিব এবং পার্বতী একবার সিদ্ধ পিঠ হিংলাজ যাচ্ছিলেন। পথ চলতি শিব ঠাকুরের খুব খিদে পায় এবং সেই সময় তিনি দেবী পার্বতীকে কিছু রান্না করার জন্য বলেন। পার্বতী তখনই তা রান্নার জোগাড় শুরু করলেন। যাবার সময় শিব ঠাকুর বললেন, ‘আমার অনুপস্থিতির সুযোগ নিয়ে এই বনের কোন হিংস্র পশু এখানে উপস্থিত হতে পারে। কিন্তু ভয় নেই আমি তোমার চারদিকে মন্ত্রপূতঃ ভষ্মরেখার এক বন্ধনী দিয়ে যাচ্ছি। এই বন্ধনীর ভেতরে আসার চেষ্টা করলে পশু তখনই ভষ্ম হয়ে যাবে। এছাড়াও আমার এই ত্রিশূল রইল তোমার পাশে। সতর্কতামূলক ব্যবস্থা করে ভগবান শিব অন্তর্হিত হলেন। কিছুক্ষণ বাদেই এক ভীষণ আকৃতি দানব সেখানে উপস্থিত হল। বনমধ্যে একা দেবী পার্বতীকে দেখে কাম-লালসায় সে উন্মত্ত হয়ে ওঠে। দৌড়ে আসে তাকে ধরার জন্য। এমতাবস্থায় দেবী পার্বতী ক্ষুব্ধ হয়ে তখনই ভগবান শিবের রাখা ত্রিশূল নিক্ষেপ করেন। মুহূর্তে আহত হয়ে মাটিতে পড়ে যায় দানব। তার শরীর থেকে ঝরতে থাকে অঝরে রক্ত। সেই রক্তের জন্য ভগবান শিবের জন্য তৈরি খিচুড়ি অপবিত্র হয়ে যায়। কিছুক্ষণ পরেই ভগবান শিব সেখানে উপস্থিত হন। তাকে দেখে সেই দানব তার চরণে আশ্রয় নেন। কাতর কণ্ঠে অনুরোধ করেন যেন ভগবান তাকে মুক্ত করেন। কারণ দেবী পার্বতী স্বহস্তে ভগবান শিবের ত্রিশূল দিয়ে তাকে আঘাত করেছেন। আশুতোষ দানবের স্তব-স্তুতি এবং আর্তিতে তুষ্ঠ হয়ে ‘তথাস্তু’ বর দেন। তার মরদেহ পরিণত হয় ভষ্মে।
এদিকে ভগবান শিবের আদেশে অপবিত্র করা সমস্ত আহার্য বনে ফেলে দেওয়া হয়। ওই অন্নের দানাগুলো খুব শীঘ্রই পাথরে পরিণত হয় এবং তার থেকে উৎপন্ন হয় পরম পবিত্র ঠুমরা এবং আশাপুরী দানা।