ওয়েব ডেস্ক: অসহ্য গরম বা অতিরিক্ত ঠাণ্ডা কোনওটাই বাচ্চাদের জন্য ভাল নয়। বিশেষত ৫ বছরের কম বয়সীদের প্রচণ্ড রোদ ও গরমে নানান শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি থাকে। তাই এই বয়সের শিশুদের রোদ্দুরে বাইরে নিয়ে যেতে বারণ করলেন উডল্যান্ডস হাসপাতালের শিশুরোগ বিশেষজ্ঞ ডা শান্তনু রায়

পরিবেশ দূষণের ফলে গরম বেড়েই চলেছে! প্রতি বছরের রেকর্ড তাপমাত্রা অন্য বছরকে ছাপিয়ে যায়। অতিরিক্ত রোদ্দুর ও শুকনো গরমে বাচ্চাদের নানান শারীরিক সমস্যার ঝুঁকি বাড়ে। বিশেষ করে দুপুরের ঠা ঠা রোদ্দুরে শিশুদের বাইরে নিয়ে গেলে ভয়ানক অসুস্থ হয়ে পড়ার সম্ভবনা বেড়ে যায়। এই সময়ে বেশিরভাগ স্কুলে গরমের ছুটি পড়ার কথা। তবুও নানান কারণে বাচ্চাদেরও বাইরে যেতে হয়। মর্নিং স্কুল সকালে শুরু হলেও বাড়ি ফেরার সময় তীব্র রোদ থাকে। আমার মতে এই সময় বাচ্চাদের স্কুলে না পাঠানোই ভাল। প্রচণ্ড গরমে বাচ্চাদের একদিকে শরীরের তাপমাত্রা বেড়ে গিয়ে অসুস্থ হয়ে পড়ার ঝুঁকি বাড়ে অন্যদিকে অতিরিক্ত ঘেমে যাওয়ায় শরীরে জলের অভাব হতে পারে। সব মিলিয়ে শিশুটি অসুস্থ হয়ে পড়ে। এছাড়া গরমের সময় পেটের সংক্রমণ বৃদ্ধির ঝুঁকি থাকে। তাই বাইরের জল ও খাবার একেবারেই খাওয়া উচিৎ নয়।

টাটকা ফল বা বাড়িতে বানানো টাটকা ফলের রস দিলেই ভাল। বাড়িতে রান্না করা হালকা ও টাটকা খাবারই খেতে হবে। ছয় মাসের কম বয়সী শিশুদের এই গরমে বিশেষ যত্নের প্রয়োজন। জরুরি কারণ ছাড়া এদের বাড়ি থেকে বের করা অনুচিত। তবে টিকা দেবার ব্যাপারে কোনও রকম গড়মসি করা ঠিক নয়। রোদ কমলে বিকেলে বা সন্ধ্যের দিকে দুগ্ধপোষ্য শিশুদের ডাক্তারের কাছে নিয়ে যেতে পারেন। ৬ মাসে কম বয়সী বাচ্চাদের মায়ের দুধ ছাড়া অন্য খাবার এমনকি জল দেবারও দরকার হয় না। বাচ্চাকে চাপা দিয়ে রাখবেন না। খোলা জায়গায় পাখার নিচে রাখতে হবে। শীততাপ নিয়ন্ত্রিত ঘরে রাখতে পারেন। তবে তাপমাত্রা ২৪ ডিগ্রির কম যেন না থাকে সেই দিকে খেয়াল রাখতে হবে। ৩/৪ বছরের বাচ্চারা সারাদিনই দৌড়দৌড়ি করে খেলতে চায়। খেয়াল রাখতে হবে ছাদে, বারান্দায় বা খোলা জায়গায় রোদ্দুরের মধ্যে ছোটাছুটি না করে। সরাসরি রোদ্দুরে গিয়ে সঙ্গে সঙ্গে ঠাণ্ডা ঘরে ঢোকা কিংবা ঠাণ্ডা ঘর থেকে বেরিয়ে সোজা রোদ্দুরে যাওয়ার ব্যাপারে নিয়ম মেনে চলা উচিৎ।

এক্ষেত্রে চট করে শরীর খারাপ হবার ঝুঁকি থাকে। যে সব বাচ্চা টিউশন পড়তে যায়, গান, নাচ বা আঁকার স্কুল, ক্যারাটে ক্লাশ করতে যায় তাদের বাবা মায়েদের কাছে অনুরোধ রোদ কমলে এক্সট্রা ক্যারিক্যুলার অ্যাক্টিভিটির ক্লাসে নিয়ে যান। ক্যারাটে, না বা অন্যান্য খেলাধুলো প্রচণ্ড গরমে স্থগিত রাখলে ভাল হয়। বাচ্চার শারীরিক অবস্থা বিচার করে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। গরমে দৌড়দৌড়ি করে খেলতে গিয়ে বাচ্চারা যদি প্রচণ্ড ঘেমে গিয়ে ক্লান্ত হয়ে পড়ে সেক্ষেত্রে ঘামে ভেজা পোশাক খুলিয়ে হাওয়ায় বসান। নুন চিনির শরবৎ বা ওআরএস এর জল খাওয়াতে হবে। সকাল ১১ টার পরে সরাসরি রোদ্দুরে যাওয়া ঠিক নয়। ছাতা ব্যবহারের সঙ্গে সঙ্গে পর্যাপ্ত জল ও শরবৎ পান করে বাইরে গেলে ভাল হয়।

এই সময় কিছু জীবাণু সক্রিয় হয়ে ওঠে। পেটের সমস্যা, টাইফয়েড, ভাইরাল ফিভার, ঠাণ্ডা লেগে জ্বর সর্দি গলা ব্যথা হতে পারে। বৃষ্টিতে ভিজে গিয়ে যেমন ঠাণ্ডা লাগে তেমনই ঘাম বসেও ঠাণ্ডা লাগতে পারে। তাই এই ব্যাপারটাও খেয়াল রাখতে হবে। গরমে ভয়ানক বিপদে পড়তে হয় পার্কিং করা গাড়ির মধ্যে বসে থাকলে। এর থেকে মারাত্মক বিপদের ঝুঁকি থাকে। রোদ্দুরে গাড়ি পার্ক করে রাখলে ১০ মিনিটের মধ্যেই গাড়ির মধ্যেই গাড়ির ভেতরের তাপমাত্রা বেড়ে যায় প্রায় ২০ ডিগ্রি ফারেনহাইট। বাচ্চাদের পার্কিং করা গাড়িতে রেখে কেনাকাটি করতে যাবেন না। এতে প্রবল গরমে বাচ্চাটি বেহুঁশ হয়ে যেতে পারে। সুতরাং এই ব্যাপারটা ভুলবেন না। এছাড়াও আরও একটা ব্যাপার মনে রাখবেন যে রোদে না থাকলেও ঘরে দরজা জানলা বন্ধ করে রাখলে বদ্ধ ঘরের বাতাস গরম হয়ে গিয়েও বাচ্চারা অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে। ঘরের মধ্যে যেন বাতাস চলাচল করতে পারে সেদিকে খেয়াল রাখা উচিৎ। গরমের সঙ্গে সহবাস করতে যে সব নিয়ম মেনে চলা উচিৎ সেগুলি মেনে চলুন, বাচ্চা সহ সকলেই সুস্থ থাকুন। এই গরমে নিজে সাবধানে থাকুন সন্তানকে সাবধানে রাখুন। সকলে ভাল থাকুন।
যোগাযোগঃ 07604075551-55