ওয়েব ডেস্ক; ৫ জুন : মনিপাল হাসপাতাল, ঢাকুরিয়া আবারও এক অনন্য নজির গড়লো। ৭২ বছর বয়সী ডায়াবেটিক এবং উচ্চ রক্তচাপগ্রস্ত রবীন্দ্র কুমার সরকার-এর শরীরে সফলভাবে টিইভিএআর (থোরাসিক এন্ডোভাসকুলার অ্যানিউরিজম রিপেয়ার) করা হলো। সার্জারিটি পরিচালনা করেন হাসপাতালের কার্ডিওথোরাসিক অ্যান্ড ভাসকুলার সার্জারি (CTVS) বিভাগের প্রধান ডা. কৌশিক মুখার্জী এবং পরামর্শদাতা ভাসকুলার সার্জন ডা. শুভব্রত ব্যানার্জী।
সিটি অ্যাওরটোগ্রাফিতে দেখা যায়, বুকে মূল রক্তনালীতে (অ্যাওরটা) একটি ফোলাভাব তৈরি হয়েছে যা মস্তিষ্ক ও বাহুতে রক্ত সরবরাহকারী গুরুত্বপূর্ণ ধমনীর খুব কাছাকাছি। এই ফোলাভাব বা অ্যানিউরিজম এমনভাবে চাপ সৃষ্টি করছিল, যার ফলে রোগীর গলার স্নায়ুতে সমস্যা হয় এবং তার কণ্ঠস্বর বসে যায়। এই বিরল পরিস্থিতি অর্টনার’স সিনড্রোম নামে পরিচিত, যা ভারতে মাত্র ১% থেকে ৩% ক্ষেত্রে দেখা যায়।
এই অবস্থায় টিইভিএআর ছিল সবচেয়ে নিরাপদ সমাধান। কারণ ওপেন হার্ট সার্জারি রোগীর বয়স এবং অন্যান্য শারীরিক সমস্যার কারণে অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ ছিল। অ্যানিউরিজমটি ছিল ডিসেন্ডিং থোরাসিক অ্যাওরটা-তে, বাম সাবক্ল্যাভিয়ান আর্টারির ঠিক পরেই — যা অত্যন্ত সংবেদনশীল এলাকা। তবুও, সার্জনরা অত্যন্ত দক্ষতার সঙ্গে স্টেন্ট গ্রাফ্ট বসিয়ে অ্যানিউরিজমটি সিল করতে সক্ষম হন। এই অস্ত্রোপচার হয় ২৬ মে ২০২৫ এবং রোগী ২ দিনের মধ্যেই হাসপাতাল থেকে ছাড়পত্র পান।
ডা. কৌশিক মুখার্জী বলেন, “গলা বসে যাওয়া থেকে শুরু করে অ্যানিউরিজম পর্যন্ত আমরা এক জটিল চিত্র পাই। রোগীর জন্য ওপেন সার্জারি ছিল অসম্ভব। তাই আমরা টিইভিএআর বেছে নিই। এই টেকনিক্যালি চ্যালেঞ্জিং অপারেশনে আমরা সফলভাবে অ্যানিউরিজম বন্ধ করি, কোনও গুরুত্বপূর্ণ রক্তনালিকে ক্ষতি না করেই।”
ডা. শুভব্রত ব্যানার্জী বলেন, “এই ধরনের অস্ত্রোপচারের মাধ্যমে আমরা রোগীর জীবনমান বজায় রাখতে পারি, ঝুঁকি কমিয়ে। টিইভিএআর-র মাধ্যমে এখন বহু জটিল কেস ম্যানেজ করা সম্ভব, যা একসময় ওপেন চেস্ট সার্জারি ছাড়া ভাবাই যেত না।”
রোগী শ্রী রবীন্দ্র কুমার সরকার বলেন, “আমি বহু চিকিৎসকের কাছে গিয়েছিলাম, কিন্তু কেউই আমার গলার সমস্যার সঠিক কারণ বুঝতে পারেননি। ঢাকুরিয়ার মনিপাল হাসপাতালে এসে আমি শুধু রোগ নির্ণয়ই পাইনি, বরং নতুন জীবন ফিরে পেয়েছি। এখন আমার গলা আগের চেয়ে অনেক ভালো, শরীরেও উন্নতি হচ্ছে।”